ধরুন দেশের বাইরে কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে যাত্রাটুকুই নাকি খুব আনন্দের। কিন্তু সেই যাত্রার অভিজ্ঞতা খুব বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে যদি বিমানবন্দরেই মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এমনিতেই দুই থেকে আড়াইঘন্টা আগে বিমানবন্দর পৌঁছাতে বলা হয়। এর পর থেকে শুরু হয় একের পর পর লম্বা লাইন। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাকে পাসপোর্ট দেখাতে হবে।
শুরুতে এয়ারলাইন কোম্পানির চেক-ইন কাউন্টারে, যদি অনলাইনেও চেক-ইন করা থাকে তবুও লাগেজ দিতে গিয়ে এক দফা, নিরাপত্তার ধাপ পার হতে গিয়ে একবার, তারপর ইমিগ্রেশন বা পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণে গিয়ে এবং একদম শেষে বিমানে চড়ার আগে বোর্ডিং গেটে। বেশিরভাগ বিমানবন্দরে এই ধাপগুলোতে একবার করে পাসপোর্ট বের করতে হয়।
কোন কোন দেশের বিমানবন্দরে এর মধ্যে আগে পরে আরও ধাপ থাকে। যেমন প্রচুর অভিবাসীদের যাতায়াত রয়েছে এমন বিমানবন্দরে অভিবাসীদের জন্য থাকে বাড়তি নিরাপত্তা তল্লাসি, কাগজপত্র মেলানো ও সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। প্রতিটা ধাপে খুব দ্রুত হলেও একবার করে যদি আপনার পাসপোর্টের তথ্যের পাতার দিকে নজর বোলাতে হয়, ভিসা আছে কিনা অথবা ছবির সাথে চেহারার মিল আছে কিনা সেটি দেখা হয় তাহলে বিমানের আসল যাত্রার সাথে বিমানবন্দরে যে সময়টুকু যোগ হয় তাতে যাত্রার সময় সব মিলিয়ে অনেক দীর্ঘ হয়ে ওঠে। যেমন দুই ঘণ্টার ফ্লাইটের আগে বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতায় দুই ঘণ্টা। গন্তব্যে পৌঁছেও রয়েছে অন্তত একটি ধাপ।
বছর বছর বিশ্বব্যাপী বিমানযাত্রী বাড়ছেই। ২০১৮ সালে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি যাত্রী বিমানযাত্রা করবেন বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এত বিশাল সংখ্যক যাত্রীর যাত্রাপথের সময় কমাতে নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তি
বিশ্বের সবচাইতে ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো এক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি ঝুঁকছে ফেইশাল রিকগনিশন বা চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তির দিকে। যেমন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ যুক্তরাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রায় এবং যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক বহির্গমনের ক্ষেত্রে চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর লন্ডনের হিথরো। সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হওয়ার সময় যাত্রীদের ছবি তুলে নেয়া হচ্ছে। বিমানে ওঠার সময় আরেকটি ছবি তোলা হয়। এরপর কম্পিউটারে সফটওয়ার দিয়ে দুটি ছবি মেলানো হয়। প্রথম ছবিটির সাথে দ্বিতীয়টি মিলে গেলেই ধরে নেয়া হচ্ছে সঠিক যাত্রী সঠিক বিমানেই উঠছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে চেক-ইনের সময় নেয়া তথ্যের সাথে নিমিষেই মেলানো হচ্ছে ছবি, আঙুলের ছাপ, পাসপোর্ট ও ভিসার তথ্য। এর প্রায় সবক্ষেত্রেই ইদানীং আঙুলের ছাপ ও ছবি এমনিতেই দিতে হয়। সকল তথ্য ডাটাবেজেও চলে যায়। বোর্ডিং গেটে সেগুলো সফটওয়ারের মাধ্যমে যাচাই করে নেয়া হয়।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ডিজিটাল এয়ারপোর্ট নকশার ব্যবস্থাপক রাউল কুপার বলছেন, এর মাধ্যমে ধরুন ২৪০ যাত্রীর বিমানে চড়তে যা সময় লাগে তা অর্ধেক করে ফেলা সম্ভব। ফ্লাইট সময়মত ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ উন্নতি সম্ভব। শুধু সময় নয়, কোন যাত্রী সময় মতো বোর্ডিং গেটে না এলে বা হারিয়ে গেলে ভিড়ের মধ্যে থেকে ক্যামেরায় ফেইশাল রিকগনিশন প্রযুক্তি দিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতের বিমানবন্দর
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে একই ধরনের চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা বিমানবন্দরে ইতিমধ্যেই চেক-ইন কাউন্টার ছাড়াই যাত্রী ও লাগেজ চেক-ইন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি ইমিগ্রেশন ও বিমানে ওঠার সময়ও সেই ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে কেউ আপনার পাসপোর্ট বা ভিসা চেক করবে না। আপনি নিজেই কোন একটি যন্ত্রে বারকোড দিয়ে সব করে নিতে পারবেন।
দুবাই বিমানবন্দর যেন আরো এক ধাপ আগে গিয়ে চিন্তা করছে। তারা নিরাপত্তা ডেস্কের বদলে অ্যাকুরিয়ামের মতো কাচ ঘেরা টানেল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে ৮০ টির মতো চেহারা শনাক্তকরণ ক্যামেরা বসানো থাকবে। যেগুলো থাকবে খেলনা মাছের মধ্যে। টানেলের মধ্যে দিয়ে যাত্রীদের ডিপারচার গেটের দিকে যেতে হবে। তখন ক্যামেরায় নানা দিক থেকে তাদের ছবি তোলা হতে থাকবে। সেই ছবি ডাটাবেজে থাকা পাসপোর্ট, ভিসা ও অন্য ছবির সাথে সফটওয়ার দিয়ে মিলিয়ে নেয়া হবে। এ বছরের শেষের দিকে প্রথম টানেলটি বসানোর কথা রয়েছে।
সেলফ বোর্ডিং, যেখানে বায়মেট্রিকস দিয়ে নিজেই সব করে নিচ্ছেন যাত্রীরা।
রাউল কুপার মনে করছেন, কোন একদিন হয়ত বিমানবন্দরে একবারও পাসপোর্ট স্ক্যান করার দরকার পরবে না। ব্যাগ বা পকেট থেকে সেটি বের করারই হয়ত দরকার হবে না।-বিবিসি।