নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করে বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে স্থায়ী করার নীলনকশা করছে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার নানামূখী গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে নিশিরাতের সরকার।
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করে বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে স্থায়ী করার নীলনকশা করছে। মূলত, আজ্ঞাবহ ইসি প্রধানমন্ত্রীকে পুনরায় নির্বাচিত করার একটি মেশিন।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিএনপিরএক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সংলাপ নিয়ে ক্ষীণস্বর কর্পুরের মতো। তাদের সংলাপের কথা মাটিতে পড়ার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সংলাপ নিয়ে আওয়ামী নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে তারা জাতীয় তামাশার মূখপাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন জনগনের কাছে।’
‘এতে জনগন বিমূঢ় বোধ করলেও জাতির সঙ্গে তামাশা করাটাই আওয়ামী লীগের পপুলার সংস্কৃতি। তারা গনতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি সবমসময় এড়িয়ে যায়।’
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পূনঃপ্রবর্তনই হবে সংলাপ বা যেকোনো আলোচনার মূল ভিত্তি বা এজেন্ডা হবে উল্লেখ করে বিএনপির এ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা শুনলেই শাসকগোষ্ঠির ক্রোধবহ্নি জ্বলতে থাকে। কারণ, এরা দেশের সকল গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে নির্বিকার ও নিবিষ্টচিত্তে। সুতরাং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে ওঠার শামিল।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একের পর এক দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে শেখ হাসিনা দেশে নিষ্ঠুর নাৎসি শাসন অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী আজীবন ক্ষমতায় থাকতে ও দুর্নীতিকে অবাধ রাখার জন্য সংবিধান কাটাছেড়া করে-সংশোধনী, কালাকানুন, ইনডেমনিটি সবকিছু পাশ করে নিয়েছেন বিনা ভোটের অবৈধ সংসদে।’
‘পুরো ভোট বাতিলের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস করেছে ভুয়া ভোটের এমপিরা। নিজের স্বাধীনতাকে বিক্রি করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
বর্তমানে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয় দাবি করে বিএনপি নেতা রিজভী আরও বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ম্যানিপুলেট করার একটি মেশিন। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের কারণে চলমান নির্বাচন বাতিলের যে ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ছিল তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান থাকলেও এখন সরকারের দুর্নীতিবাজ লুটেরা ঋণ খেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে।’
‘এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং এর সারবত্তা নিঃশেষ করে দেওয়া হলো। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র মাস ছয়েক আগে ইসিকে ক্ষমতাহীন-নখদন্তহীন করার উদ্দেশ্য-সুদুরপ্রসারী। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথকে রুদ্ধ করা জন্য এটি শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যান।’
রিজভী বলেন, ‘যেখানে দেশি-বিদেশি সকল মহলের পক্ষ থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করার জোর দাবী উঠেছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সরকার আরো জোরালোভাবে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে গেলো। এতে আবারও প্রমানিত হলো শেখ হাসিনার অভিধানে সুষ্ঠু নির্বাচন নেই। এই সংশোধনী দুরভিসন্ধীমূলক, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার বেপরোয়া মনোভাব আরো বেশি প্রকট হলো।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হলেও যাতে কিছু করতে না পারে সেজন্য এই রক্ষাকবচ। শুধু কেন্দ্রভিত্তিক ভোট বাতিলের ক্ষমতা রাখলে কেন্দ্রের বাইরে উক্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ভোটারকে বাধা প্রদান বা ভয় ভীতি প্রদর্শন বা বল প্রয়োগ করলে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার ক্ষমতা থাকলো না।’
‘তাদের দলীয় ক্যাডার, ছাত্রলীগ থেকে রিক্রুট করা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী-প্রশাসন দিয়ে সমস্ত ভোট কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করবে, বলপ্রয়োগ,হাঙ্গামা,ভীতি-প্রদর্শন,চাপ সৃষ্টি করবে। আর নির্বাচন কমিশন দুই-তিনটি কেন্দ্র অনিয়ম হয়েছে নাটক করে ভোট বাতিল করলেও আওয়ামীলীগের জয় নিশ্চিত। এটাই আওয়ামী লীগের নতুন ফর্মুলা।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘গোটা প্রশাসনকে মুজিবকোটময় করা হয়েছে। দলদাস আমলারা এখন আইনবিধি কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। ক্ষমতার মায়া হরিণের পিছে দৌড়াতে গিয়ে তারা নীতি, নৈতিকতা এবং রাষ্ট্রের আইনকে পদদলিত করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
‘চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে সরাসরি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব-বাসাবাড়ীতে গোপন শলাপরামর্শ করছে। সেখানে একতরফা নির্বাচনের নতুন নীলনকশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারি র্কমচারীদের জন্য প্রণীত আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে ভোটের মাঠে নেমেছেন কোনো কোনো অতি দলবাজ আমলা।’
সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মামলার বিবরণী তুলে ধরা হয়। এছাড়াও সরকারদলীয় নেতাদের বিভিন্ন হুমকি ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ভিডিও প্রদর্শনী করা হয়।
গত দেড় মাসে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২২৫টি হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৬৫ জন এবং ১০ হাজার ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, খান রবিউল ইসলাম প্রমুখ।