মানুষের নাকি আকুলি-বিকুলির ভেতর দিয়ে দিন চলে যায়। আশা পূরণ হয় না, সেই আশা আর নিরাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে একদিন পাড়ি দিতে হয় অনন্তের দিকে, এই খেলা সৃষ্টির আদিতেই শুরু হয়েছিল, শেষ নেই। যতদিন এই মায়াময় প্রেমলিপ্সার জগতে আমরা থাকব, ততদিনই চেষ্টা করে যাব যাতে অনাগতদের হাতে অন্তত একটি প্রজ্বলিত আলোক বর্তিকা দিয়ে যেতে পারি। রবীন্দ্রনাথও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, যেন আজীবন মানুষের হূদয়ে থেকে যেতে পারেন। সেই আজীবন মানুষের হূদয়ের মধ্যে যে শুধু কবিগুরুই সমাহিত হতে চেয়েছিলেন তাই নয়। সেই আর্তি সকলেরই থাকে, সম্রাট শাজাহান থেকে শুরু করে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার অধ্যাপক মোহাম্মদ হবীবুল্লাহও এর ব্যতিক্রম নন যিনি ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা শেষে, ফলাফল বেরুনোর আগেই, পাকশীর চন্দ্রপ্রভা হাইস্কুলে ইংরেজি পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ঐ চন্দ্রপ্রভা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
মোহাম্মদ হবীবুল্লাহ তিনি স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক থাকাকালীন একটি পুস্তক রচনা করেছিলেন, যেটির নাম দিয়েছিলেন ‘পাকশী ঈশ্বরদী: ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ এই শিরোনামে। তাঁর সুলিখিত গ্রন্থে জানিয়েছেন আমাদের অনেক অজানা তথ্য। আমরা জানি পলাশীর যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই বাংলার নদীপথই ছিল রাজপথ, ব্রিটিশদের শাসন আমলে পদ্মা নদীর প্রথম ম্যাপ বা মানচিত্র অঙ্কিত হয়েছিল ১৭৬৪ সালে।
দ্বিতীয় ম্যাপটি আঁকা হয়েছিল ১৮৬৮ সালে, ১০৪ বছর পরে, তৃতীয় ম্যাপটি আঁকানো হয়েছিল ১৯১০ সালে। সেই বছরেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। উপরোক্ত তথ্যাদি আমরা অনেকেই জানি না। জানলাম অধ্যাপক মোহাম্মদ হবীবুল্লাহ রচিত বইটির মাধ্যমে।
রাজশাহী শাহ মখদুম কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক জানালেন মোহাম্মদ হবীবুল্লাহর খ্যাতির কথা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি দুস্থদের মানবিক সাহায্য করে সুনাম অর্জন করেছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঈশ্বরদী পাকশীর বিহারীদের হাত থেকে অনেক বাঙালিকে। নিজের জীবন বিপন্ন করে আশ্রয় দিয়েছিলেন তার নিজ গ্রাম বাখাউলে।
তিনি আমার পরিচিত ছিলেন ৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে। সুদর্শন। সেই সুদর্শনই গত ২১ অক্টোবর পাড়ি দিলেন সেই অনন্তে। না ফেরার দেশে। আশা করি তিনি ভালো থাকবেন। এইটুকুই কামনা করি।