৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের হাসিনা সরকারের পতনের পর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিশালী কূটনীতি অবস্থান নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর এই প্রথম কোন বাংলাদেশি সরকার তাদের নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানান দিয়েছে। এর ফলে নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে পার্শ্ববর্তী এই দেশটি।
স্বাধীনতার পরবর্তী ভারত ইস্যুতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই অবস্থান থেকে সরে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু তার পরবর্তীতে আর কেউ সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ভারতের কাছে দেশে সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। এ বিষয়ে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে।’
ক্ষমতাগ্রহণের পরপরেই ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলিখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ভারতীয় ‘র’য়ের প্রেক্রিপশনে নেয়া হয় আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ। এর মধ্যদিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টারকে রক্ষাসহ দেশের সকল স্বার্থ রক্ষায় নিজ দায়িত্বে কাজ করতে থাকে শেখ হাসিনা সরকার। ভারতের সহায়তার বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে বসার বিনিময়ে দেশ থেকে লুট করা অর্থের বড় অংশ তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহার করা হতো করা হতো।
গণঅভ্যুত্থানের হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শপথ গ্রহণের আগেই আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার কূটনৈতিক অবস্থান বিশেষ করে ভারত ইস্যুতে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। এতেই ভারতের দাদাগীরির মনোভাবে ধাক্কা লাগে। পরবর্তীতে সরকার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের শক্ত অবস্থানের কথা জানান দেয়। গত ৪ মাসে সরকারের নানা পক্ষে ভারত বুঝতে সক্ষম হয় যে, এখন আর বাংলাদেশে তাদের দাদাগিরি চলবে না। বরং বাংলাদেশের সাথে তার যত ভালো সম্পর্ক রাখবে, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও অখণ্ডতার জন্য ততই মঙ্গলজনক হবে।
এদিকে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের কারণে শত চেষ্টা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে তারা কোনোভাবেই দুর্বল করতে পারেনি। বরং অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে, যা ভারতের মাথা নত করার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
গত ২ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলার ঘটনায় দেশটির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এদিকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ সরকার ও সাধারণ মানুষ। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়।
সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) জন্য ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। দু’দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশে শক্তিশালী কূটনীতি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর ফলে ভারত নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেভেন সিস্টারে অখণ্ডতা রক্ষায় নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। সরকারের এ অবস্থানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশের আপামর জনগণ। এই ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়াও প্রশংসায় ভাসছে সরকার।