• শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
বিলুপ্তির পথে থাকা এশিয়ান প্রজাতির বন্যহাতির সংখ্যা বাড়ছে সীমান্তাঞ্চলে পর্যটকবাহী যান পাহাড়ি খাদে পড়ে সাজেকে ১০ যাত্রী আহত বাংলাদেশ ভিসা দেওয়া সীমিত করলো ভারতীয়দের যুক্তরাষ্টের বিরুদ্ধে এক হচ্ছে ইরান চীন ও রাশিয়া পালিয়ে যাওয়া হাসিনার সব ধরনের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা ট্রাইব্যুনালের ভৈরব থেকে গ্রেফতার আইনজীবী সাইফুল হত্যার প্রধান আসামি চন্দন তালিকায় নাম না থাকায় ফিরে আসেন কর্নেল অলি, যা বললেন জামায়াত আমির অবশেষে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে গেজেট জারির উদ্যোগ আলোচিত ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিক সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ আরো কমছে বিনিয়োগ বাড়ার আশা

আপডেটঃ : বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ কমতে শুরু করেছে। প্রতিমাসেই অব্যাহতভাবে তা কমছে। চলতি বছরের অক্টোবরেও ঋণের সুদের হার কমেছে। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে এ ধারা অব্যাহত থাকলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে উত্সাহীত হবেন বলে আশার করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, নতুন বিনিয়োগের জন্য সুদের হার অন্যতম বড় বাধা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, গত অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর গড়ে সুদ দিয়েছে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। সেই হিসেবে সুদহার দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে গত অক্টোবরে ঋণের সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল গড়ে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত এক মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার কমিয়েছে দশমিক তিন শতাংশ।
তবে এসময় ব্যাংক খাতের সার্বিক (সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানা) চিত্র ভিন্ন। অক্টোবরে দেশের ব্যাংক খাতের গড় আমানতের সুদহার কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে ঋণের সুদহার। এসময় ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর গড়ে চার দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ দিয়েছে। যা তার আগের মাসে দশমিক এক শতাংশ বেশি ছিল। এছাড়া অক্টোবরে সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলো ঋণের ওপর সুদ নিয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাত্ এক মাসের ব্যবধানে ঋণের ওপর সুদহার বাড়িয়েছে দশমকি ৪ শতাংশ।
এদিকে ঋণ ও আমানতের সুদহারের তারতম্যের কারণে বেসরকারি ব্যাংক খাতের ঋণ আমানতে সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কিছুটা কমেছে। আগের মাস সেপ্টেম্বরে স্প্রেড ছিল চার দশমিক ৫৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। অক্টোবরে তা কমে চার দশমিক ৪৮ শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি সবগুলো ব্যাংকের সার্বিক স্প্রেড হার বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে যেখানে ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছিল চার দশমিক ৪৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। এক মাসের ব্যবধানে তা দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে সাড়ে চার শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
স্প্রেড হলো- ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ থেকে যে হারে অর্থ সংগ্রহ করে তার সঙ্গে লাভ ও ব্যবস্থাপনা খরচসহ বিভিন্ন খরচ যোগ করে ঋণ গ্রহীতাদের যে হারে ঋণ দেয় তার ব্যবধান। স্প্রেড বেশি হলে ঋণ গ্রহীতার ওপর যেমন চাপ বাড়ে তেমন আমানতকারীরাও ঠকেন। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া আমানতকারীরা বেশি লাভের আশায় বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ খোঁজেন। যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ এবং স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে বিচার বিবেচনাপূর্বক প্রকৃত ঋণগ্রহীতা নির্বাচন করে ঋণ সমপ্রসারণের মতো পর্যাপ্ত তারল্যও ব্যাংকগুলোর হাতে রয়েছে। তারা বলছেন, সার্বিকভাবে এ সুদহারের ব্যবধান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত সীমার মধ্যে থাকলেও কিছু ব্যাংক আমানতের অনুপাতে ঋণের সুদহার কমাচ্ছে না। এছাড়া ব্যাংক খাতে স্প্রেড বেড়ে যাওয়া দুশ্চিন্তার কারণ। তাই এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসেও বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ৯টি ব্যাংকের স্প্রেড বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত সীমার বাইরে রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে এর সংখ্যা ছিল ১১টি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। এরপরেই রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। সবচেয়ে কম স্প্রেড বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের এক দশমিক ৩৯ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের। তবে ব্যাংকটির আমানত ও ঋণের সুদহার গড় সুদহারের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ব্যাংকের কাছে প্রচুর পরিমাণে অলস টাকা পড়ে আছে। বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। আবার খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যয় নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। এত কিছুর পরও বছর শেষে রয়েছে ভালো মুনাফা অর্জন করার টার্গেট। ফলে আমানতকারীদের দিকে খেয়াল না রেখেই বছর শেষে ভালো মুনাফা অর্জনের স্বার্থে আমানতের সুদ কমাচ্ছিল ব্যাংকগুলো। এখন সেখান থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে হয়।
তাই  স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানছে না এসব ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ শতাংশের  বেশি স্প্রেড থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদেশি খাতের—স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি ও সিটি ব্যাংক এনএ এবং বেসরকারি খাতের- দ্য সিটি ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের দ্য ফারমার্স ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকও রয়েছে এ তালিকায়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আমানতের বিপরীতে গড়ে এক দশমিক ২০ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ সুদ নিয়েছে। ফলে বিদেশি খাতের এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর ঋণের বিপরীতে সুদ নিয়েছে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর ডাচ বাংলা ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ সুদ দিলেও ঋণের ক্ষেত্রে আদায় করেছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ফলে ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশীয় পয়েন্ট।
এদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর স্প্রেড এখনো পাঁচ শতাংশের ওপরে রয়েছে। অক্টোবরে বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে এক দশমিক ৬৩ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে আদায় করেছে আট দশমিক ০২ শতাংশ সুদ। এ খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড সবচেয়ে বেশি, যা ছয় দশমিক ৩৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে দেশীয় খাতের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। গত অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে আট দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আর আমানতের বিপরীতে দিয়েছে চার দশমিক ৪০ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক ৮৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে কম। যা মাত্র দুই দশমিক ৮২ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক আমানতের বিপরীতে গড়ে ৫ দশমিক ৫০ ও ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে সুদ নিয়েছে আট দশমিক ৭০ ও ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ