• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বিশ্ব ইজতেমা একক নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা থেকে সরে এলেন জুবায়েরপন্থিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে বইমেলা : সংস্কৃতি উপদেষ্টা তথ্য উপদেষ্টা নাহিদকে উদ্দেশ করে ‘বাটপার’ স্লোগান দেননি শিক্ষার্থীরা ইসরাইলি প্রধান বিমান ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর হামলা কর প্রত্যাহার করেও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম: অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশের অর্জনকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন : মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ জন্য নেপালের জলবিদ্যুৎ সহজলভ্য হবে ইসলামি বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ সংবিধান সংশোধন নিয়ে যে প্রস্তাব দিলেন ইসরাইলে আটক ফ্রান্সের কর্মকর্তা, কড়া হুঁশিয়ারি ইসরাইলকে সেনা হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার করলেন শ্রমিকরা

পেঁয়াজ সংকটের নেপথ্যে

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

কেউ যখন ১৩০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কেনেন, স্বভাবতই তিনি ভাবতে পারেন, পেঁয়াজ চাষ না জানি কতই লাভজনক! পেঁয়াজ চাষীরা না জানি কত সুখ-শান্তিতে আছেন। নেপথ্যের খবর যারা জানেন না, তারা এমনটা ভাবলে দোষ দেয়া যায় না। সত্য হল, পেঁয়াজের এই অগ্নিমূল্যে কৃষকের লাভ নেই। লাভ সব ব্যবসায়ী আর মধ্যস্বত্বভোগীদের। মৌসুমে কৃষক এক কেজি পেঁয়াজ ১২-১৫ টাকা, এক মণ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন। অথচ বীজ, সার, শ্রমিকের খরচ মিলিয়ে এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে লেগে যায় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। ফলে লাভ নয়, লোকসানে পড়েন কৃষক। পেঁয়াজ হল দ্রুত পচনশীল খাদ্যপণ্য। এটি সংরক্ষণ করতে হয় হিমাগারে, যা কৃষকদের নেই। তাই তারা পানির দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।
ভরা মৌসুমে নানা দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়, যার গুণগত মান খুবই খারাপ। এতে করে বাজারে পেঁয়াজের দাম পড়ে যায়। কৃষকের দুঃখের শেষ থাকে না। গত মৌসুমে পেঁয়াজের অগ্নিমূল্য দেখে এবার কৃষক বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন, পেঁয়াজ বিক্রির মুনাফা দিয়ে কত কিছুই না করবেন। মেয়ের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবেন, ছেলেটাকে একটা সাইকেল কিনে দেবেন, বউকে দেবেন একটা নতুন কাপড়, মায়ের চিকিৎসা করাবেন। বাস্তবে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে যে অসাধু কারবার হয়, সেটা নিচের তথ্যগুলোতে চোখ বুলালেই বোঝা সম্ভব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ থেকে ২৪ লাখ টন। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন দেশের কৃষকরা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়ে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন। সব মিলিয়ে অর্থবছরে মোট পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় ২৯ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে প্রায় ৭ লাখ টন বেশি। এই বাড়তি পেঁয়াজ গেল কোথায়? সরবরাহ বেশি হলে দাম কম হওয়ার কথা। অথচ এ দেশে হয় উল্টোটা! অর্থনীতির অনেক সূত্রই এখানে কাজ করে না।
কৃষকদের বাঁচাতে পেঁয়াজের আঞ্চলিক সংরক্ষণাগার নির্মাণ করতে হবে। এতে কৃষক ভালো দামে সারা বছর পেঁয়াজ বিক্রি করে টিকে থাকতে পারবেন। ক্রেতারা ভালো মানের পেঁয়াজ ন্যায্য দামে কিনতে পারবেন। পেঁয়াজের মৌসুমে আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। মোট চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশ পেঁয়াজ যদি দেশের কৃষকরা পূরণ করতে পারেন, তাহলে বাকি ২৫ শতাংশও পারবেন। এজন্য কম সুদে ঋণ, ভালো বীজ, ন্যায্য দামে সার সরবরাহ, উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি, পেঁয়াজের নায্য দাম পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে উৎপাদিত ১৮ লাখ টন নয়, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আমদানি করা ১০ টন পেঁয়াজ। এটা মেনে নিতে যে কারও কষ্ট হওয়ার কথা। কৃষকদের স্বার্থ এবং দেশকে পেঁয়াজে স্বনির্ভর করার কথা ভেবে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান : প্রাবন্ধিক, বরিশাল


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ