পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রথমে কোন ধরনের অর্থায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
নির্মল ইন্দু সরকার, প্রভাষক
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল এন্ড কলেজ ঢাকা।
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। বিশ্বব্যাংক ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশ বিকল্প অর্থায়নের কথা ভাবল। সরকার নিজে এবং বেসরকারি সহায়তায় অর্থায়নের মাধ্যমে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করল।
ক. সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী? ১
খ. ব্যবসায়ের মূল চালিকাশক্তি বলা হয় কোনটিকে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রথমে কোন ধরনের অর্থায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. পদ্মা সেতু নির্মাণে বিকল্প অর্থায়নের উদ্যোগ গ্রহণের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর। ৪
উত্তর:
ক. সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানেই অর্থায়নের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা।
খ. অর্থকে ব্যবসায়ের মূল চালিকাশক্তি বলা হয়। ছোট, বড়, মাঝারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান গঠন করি না কেন, অর্থের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। পণ্য ক্রয়, যন্ত্রপাতি ক্রয়, দোকান সাজানো, কর্মচারীদের বেতন দেয়া সকল কাজেই অর্থ জড়িত। অর্থ ব্যতীত ব্যবসায়ের কাজ সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। এ জন্যই অর্থকে মূলচালিকা শক্তি বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার প্রথমে সরকারি অর্থায়নের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছিল। যে অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য জনকল্যাণ, মুনাফা অর্জন নয় তাকে সরকারি অর্থায়ন বলে। সরকারি অর্থায়নে সরকার জনগণের হয়ে কাজ করে। উদ্দীপকে বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণ চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। বিশ্বব্যাংক ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়। এখানে বাংলাদেশ সরকার সরকারি অর্থায়নের সাথে জড়িত। কারণ সরকার ও অর্থের ব্যবহারের সাথে জড়িত। আবার ঋণ পরিশোধেও সরকার জড়িত। যা জনগণের স্বার্থে জনগণের টাকায় পরিশোধ করা হবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বাংলাদেশ সরকার সরকারি অর্থায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
ঘ. ঝুঁকি এড়াতে বিশ্বব্যাংক শর্তযু্্ক্ত ঋণ গ্রহণের বিকল্প হিসাবে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও যথার্থ। সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে বৃহত্ প্রকল্পগুলোতে যে অর্থায়ন করা হয় তাকে PPP (Public Private Partnership) বলা হয়। বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থায়ন পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তা বিশ্বব্যাংকের কঠিন শর্তাবলি কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। উদ্দীপকে দেখা যায়, বিশ্বব্যাংক ঋণের জন্য নানা রকম শর্ত জুড়ে দেয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের শর্ত মানা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং কঠিন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার জনগণের নিকট থেকে অর্থায়ন করতে পারে। কারণ সরকারি খাতে অর্থ বিনিয়োগ করা ঝুঁকিমুক্ত হওয়াতে জনগণ স্বেচ্ছায় বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। সরকারি তহবিলের সাথে বেসরকারি তহবিল যুক্ত করতে পারলে সেতুটি নির্মাণ করা সহজ হবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের পরিবর্তে দেশের জনগণের কাছ থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে পারলে মূলধন ব্যয়ের পরিমাণও কমে যাবে, যা পরবর্তীতে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা সম্ভব হবে।
পরিশেষে বলা যায়, অভ্যন্তরীণভাবে অর্থায়নের সুরাহা করতে পারলে দেশ ঝুঁকিমুক্ত থাকে। তাই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ঋণ না নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় অর্থায়ন করা অধিক যুক্তিযুক্ত।