আয় সিদ্ধান্তের অপর নাম অর্থায়ন সিদ্ধান্ত
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
নির্মল ইন্দু সরকার, প্রভাষক
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল এন্ড কলেজ ঢাকা।
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত ‘দিনা অয়েল কোম্পানি’ প্রতি বছর বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে তেল রপ্তানি করে। উক্ত কোম্পানিতে কর্মরত জনাব রাসেল তা স্ত্রীর নিকট নিয়মিত টাকা পাঠায়। তার স্ত্রী উক্ত টাকায় গ্রামের বাড়িতে একটি মত্স্য খামার স্থাপন করেছেন, যা তার পরিবারের স্বচ্ছলতার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ক. আয় সিদ্ধান্ত অপর নাম কী? ০১
খ. তারল্য ও মুনাফা মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাকারী নীতির ব্যাখ্যা কর। ০২
গ. উদ্দীপকে কোন ধরনের অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে? বর্ণনা কর। ০৩
ঘ. দেশের অর্থায়নে জনাব রাসেলের ভূমিকা মূল্যায়ন কর। ০৪
উত্তর:
ক. আয় সিদ্ধান্তের অপর নাম অর্থায়ন সিদ্ধান্ত।
খ. তারল্য ও মুনাফার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাকারী নীতিটি তারল্য – মুনাফা নীতি নামে পরিচিত। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফার কত অংশ নগদ সংরক্ষণ করা হবে এবং কত অংশ বিনিয়োগ করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যই তারল্য বনাম মুনাফা নীতি অনুসরণ করা হয়। বেশি অর্থ সংরক্ষণ করলে ব্যয় মিটানো সহজ হয় কিন্তু বিনিয়োগ করলে কারবারে দৈনন্দিন ব্যয় মিটানোর জন্য নগদ অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই তারল্য ও মুনাফার মধ্যে উপযুক্ত ভারসাম্য বজায় রাখা অর্থায়নের অন্যতম নীতি।
গ. উদ্দীপকে পারিবারিক অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে। পরিবারের আয় ও ব্যয়ের সুষম ব্যবহারের জন্য আয় বুঝে ব্যয় করার জন্য যেভাবে অর্থায়ন পরিকল্পনা করা হয় তাকে পারিবারিক অর্থায়ন বলে। উদ্দীপকের জনাব রাসেল সৌদি আরবে চাকুরি করে দেশে তার স্ত্রীর নিকট টাকা পাঠায়। স্ত্রী উক্ত টাকায় একটি মত্স খামার স্থাপন করেছেন। ফলে তার সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। পাশাপাশি কিছু লোকের অর্থনীতিতেও তিনি ভূমিকা পালন করছেন। এভাবে দেশে বহু ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
ঘ. বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশে মূলধন গঠনে সহায়তা করার মাধ্যমে জনাব রাসেল দেশে অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোন উত্স হতে কী পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করে, কোথায় কীভাবে উক্ত তহবিল বিনিয়োগ করা হলে কারবারের সর্বোচ্চ মুনাফা হবে, অর্থায়ন সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। উদ্দীপকের জনাব রাসেল একজন প্রবাসী চাকুরিজীবী। তিনি সৌদি আরবে চাকুরি করে দেশে তার স্ত্রীর নিকট টাকা পাঠায়। স্ত্রী উক্ত টাকায় একটি মত্স খামার স্থাপনের ফলে সেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে অধিক পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ফলে কলকারখানায় উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। অধিক চাহিদা পূরণের জন্য অধিক উত্পাদন দরকার হয় যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরো গতিশীল করে। রাসেলের মতো অসংখ্য প্রবাসী তাদের অর্জিত আয় দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিবার তথা বেসরকারি অর্থায়নের অবদান বাড়ছে।
পরিশেষে বলা যায়, সরকারের পাশাপাশি রাসেলের স্ত্রীর ন্যায় ব্যক্তিগত উদ্যেগে বিভিন্ন খামার স্থাপনে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও আয়-রোজগার বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজের সার্বিক আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায় যা জাতীয় অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এভাবে রাসেল মূলধন গঠনে সহায়তা করে দেশে অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।