রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারটি দেশের বৃহত্তম ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে তৈরি প্রথম ফ্লাইওভার। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর হইতে যান চলাচল শুরু হয় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে। চার লেনবিশিষ্ট এই ফ্লাইওভারটি শনির আখড়া হইতে বকশীবাজার মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আধুনিক এই ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের পর রাজধানীর শনির আখড়া হইতে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি ও গুলিস্তান হইয়া নিমতলী পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যাপক উন্নতি হইয়াছে। ইহাতে প্রভূত উপকৃত হইতেছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৩০টি জেলার মানুষ। কিন্তু এই ফ্লাইওভারটির নীচের সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে তাহারা আসলে ইহার পূর্ণ সুবিধা ভোগ করিতে পারিতেছেন না। উক্ত ফ্লাইওভারের বিভিন্ন অংশে নীচের রাস্তার অবস্থা অনেকদিন ধরিয়াই শোচনীয়। উদ্বোধনের চার বত্সর পরও শেষ হয় নাই এই ফ্লাইওভারটির নীচের সড়কের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ। নকশা অনুযায়ী প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের মাঝখানে সবুজায়নসহ রোড-ডিভাইডার নির্মিত হইবার কথা রহিয়াছে। কিন্তু অদ্যাবধি তাহা সম্পন্ন হয় নাই। ফ্লাইওভারের সড়কের নীচে অবৈধভাবে গড়িয়া উঠিয়াছে দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ ছাড়াও সিএনজি, টেম্পো ও বাসস্ট্যান্ড। ইহা ছাড়া কোনো কোনো স্থানে সৃষ্টি হওয়া গর্তে ময়লা-আবর্জনা ফেলিয়া রাখিবার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমিয়া কর্দমাক্ত হইতেছে পুরা সড়ক। এমতাবস্থায় প্রতিদিনই সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হইতেছে এবং বাধ্য হইয়া বিভিন্ন ধরনের পরিবহনকে ফ্লাইওভার দিয়া যাতায়াত করিতে হইতেছে।
সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হইয়াছিল যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদসহ রাজধানীর একটি অংশের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে। ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী যানবাহন খুব স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করিতেছে বটে, কিন্তু ফ্লাইওভারটির নিচের বিপর্যস্ত রাস্তাটি যেন ব্যঙ্গ করিতেছে ফ্লাইওভারের সাফল্যকে। স্থানীয়রাও এই মর্মে অভিযোগ করিয়াছেন যে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কটি নোংরা করিয়া রাখিতেছে, যাহাতে প্রয়োজন না থাকিলেও কোনো গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়াই চলাচল করিতে বাধ্য হয়। কারণ ইহাতে সংশ্লিষ্ট মহল বেশি করিয়া টোল আদায় করিতে পারিবে। মানুষের ভোগান্তির বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়া কর্তৃপক্ষ যদি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কটির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করিতে উদ্যোগী হইতেন, তাহা হইলে জনদুর্ভোগের চিত্র এতখানি খারাপ হইত না। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যদি প্রকৃতই পরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য বেহালদশা জিয়াইয়া রাখে, তবে তদন্তসাপেক্ষে সেই ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ফ্লাইওভারের পূর্ণ সুফল নিশ্চিত করিতে কর্তৃপক্ষ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করিবার বিষয়ে মনোযোগ দিবে, ইহাই প্রত্যাশিত।