এইচএসসি পরীক্ষা ২০১৮
জীববিজ্ঞান প্রথমপত্র
অলোক কুমার মিস্ত্রী, প্রভাষক
সরকারি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ, পিরোজপুর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ আমি তোমাদের জীববিজ্ঞান প্রথমপত্রের প্রথম অধ্যায়ের কোষ ও কোষের গঠন -বিষয়ের ওপর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেয়া হলো –
সৃজনশীল প্রশ্ন : জীববিজ্ঞান ক্লাসে বায়োলজির মৌমিতা ম্যাম বললেন, তোমাদের পাঠ্যবইয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষের চিত্রের মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গ রয়েছে। একটি উদ্ভিদ দেহে খাদ্য তৈরিতে ভূমিকা রাখে। অন্যটি উভয়কোষেই শক্তি জোগায়।
(ক) জিন কী? ১
(খ) ওকাজাকি খণ্ডক কী? জেনেটিক কোডের বৈশিষ্ট্য লেখ। ২
(গ) উদ্দীপকে উল্লেখিত খাদ্য তৈরি অঙ্গটির গঠন-ব্যাখ্যা কর। ৩
(ঘ) উদ্দীপকে উল্লেখিত কোন অঙ্গটি ছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষ কর্মক্ষমহীন-বিশ্লেষণ কর। ৪
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
(ক) জিন ঃ জিন হলো ক্রোমোসোমের লোকাসে অবস্থিত DNA অণুর সিকুয়েন্স, যা জীবের একটি সুনির্দিষ্ট কার্যকর সংকেত আবদ্ধ করে এবং প্রোটিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জীবের বৈশিষ্ট্যের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম।
(খ) ওকাজাকি খণ্ডক : DNA অণুর অণুলিপনে ল্যাগিং সূত্রের প্রতিলিপিত খণ্ডকে বলা হয় ওকাজাকি (Okazaki ) খণ্ডক।
জেনেটিক কোডের বৈশিষ্ট্য ঃ
wএকাধিক কোডন একটি অ্যামিনো এসিডকে কোড করে।
wএকটি কোডন কখনো একাধিক অ্যামিনো এসিডকে কোড করে না।
wকোডনসমূহ সর্বজনীন।
কোডন তৈরিতে নিউক্লিওটাইড সজ্জাক্রম অনুসরণ করে।
(গ) উত্তর ঃ উদ্দীপকের যে অঙ্গটি কেবলমাত্র উদ্ভিদকোষে খাদ্য তৈরি করতে সক্ষম, সেটি হলো ক্লোরোপ্লাস্ট (Chloroplast)। এটি স্ট্রোমা ও গ্রানাম সমৃদ্ধ এবং লাইপো-প্রোটিন ঝিল্লি দ্বারা সীমিত সাইটোপ্লাজমস্থ সর্ববৃহত্ উদ্ভিদকোষের অঙ্গ। ১৮৮৩ সালে শিম্পার (W.Schimper,1856-1901) সর্বপ্রথম উদ্ভিদকোষের মধ্যে সবুজ বর্ণের প্লাস্টিড (Plastid) প্রত্যক্ষ করেন এবং এর নামকরণ করেন ক্লোরোপ্লাস্ট। ছত্রাক, ব্যকটেরিয়া, নীলাভ- সবুজ শৈবাল প্রভৃতি কোষে এটি নেই। এমন কী প্রাণীকোষেও প্লাস্টিড নেই। নিম্নে উদ্ভিদকোষের মধ্যে সবুজ বর্ণের ক্লোরোপ্লাস্ট (Chloroplast) এর গঠন তুলে ধরা হলো ঃ
১) আবরনী ঝিল্লি (Plasma membrane) : সমস্ত ক্লোরোপ্লাস্ট একটি দু’স্তর বিশিষ্ট আংশিক অনুপ্রবেশ্য ঝিল্লি (membrane) দ্বারা আবৃত থাকে, যা লাইপো-প্রোটিন দ্বারা আবৃত থাকে।
২) স্ট্রোমা (Stroma) ঃ ঝিল্লি দ্বারা আবৃত পানিগ্রাহী (hydrophilic) ধাত্র (Matrix) বিদ্যমান। এই ধাত্রকে স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমাতে 70s রাইবোজোম , অসমোফিলিক দানা ইত্যাদি থাকে। এতে গ্লুকোজ তৈরির
এনজাইমও থাকে।
৩) থাইলাকয়েড ও গ্রানাম (Thylakoid &Granum) ঃ স্ট্রোমাতে অসংখ্য থাইলাকয়েড থাকে। থাইলাকয়েড থলে আকৃতির। কতকগুলো থাইলাকয়েড এক সাথে একটির উপর আর একটি এভাবে স্তুপের মতো থাকে। এই স্তুপকে গ্রানাম বলে। প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণত: ৪০-৬০ টি গ্রানা থাকে। গ্রানামের আকৃতি 0.3-1.7bbm ।
৪) স্ট্রোমা ল্যামেলী (Stoma Lamely) ঃ দুটি পাশাপাশি গ্রানার কিছু সংখক থাইলাকয়েডস সূক্ষ্ম নালিকা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এই সংযুক্তকারী নালিকাকে স্ট্রোমা ল্যামেলী বলে। এদের অভ্যন্তরেও ক্লোরোফিল বিদ্যমান।
৫) ফটোসিনথেটিক ইউনিট ও ATP Syntheses (Photosynthetic unit & ATP Syntheses ): থাইলাকয়েড মেমব্রেন বহু গোলাকার বস্তু বহন করে। এদের মধ্যে ATP তৈরির সকল এনজাইম থাকে। মেমব্রেনগুলোতে অসংখ্য ফটোসিনথেটিক ইউনিট থাকে। প্রতিটি ইউনিটে ক্লোরোফিল -এ, ক্লোরোফিল- বি, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল এর প্রায় ৩০০-৪০০ অণু থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের এনজাইম, মেটাল আয়ন, ফসফোলিপিড ইত্যাদি থাকে।
৬) ক্লোরোপ্লাস্টিক DNA ও রাইবোসোম (Chloroplastic DNA & Ribosome)
একটি ক্লোরোপ্লাস্টের মধ্যে সমআকৃতির প্রায় ২০০টি অণু থাকতে পারে। এছাড়া এতে রাইবোসোমও বিদ্যমান। এর সাহায্যে ক্লোরোপ্লাস্ট নিজেদের অনুরূপ সৃষ্টি করে এবং কিছু প্রয়োজোনীয় প্রোটিন তৈরি করে থাকে।
(ঘ) উত্তর : উদ্দীপকে উল্লেখিত অঙ্গাণুটি হলো Mitochondia । এটি জীবদেহের তথা কোষের অত্যাবশকীয় একটি অঙ্গাণুও বটে। এতে রয়েছে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি এসিড চক্র, Electron Transport System (ETS) । এর মাধ্যমে শ্বসনের সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর এই শ্বসনের মাধ্যমেই জীবদেহে শক্তি (Power) উত্পন্ন হয়। যেহেতু মাইটোকন্ড্রিয়া ব্যতীত কোষে শক্তি উত্পাদন সম্ভব নয় সেহেতু এ অঙ্গাণুটি ছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষ কর্মক্ষমহীন অর্থাত্ এটি ছাড়া কোষের সকল জৈবনিক কাজ ব্যহত হয়। এরা বেশ কিছু DNA ও RNA উত্পাদনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধিতে অংশ নেয়। এটি না থাকলে জীবদেহে বংশবৃদ্ধি এবং প্রকরণ (Variation) সৃষ্টি অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এছাড়াও এ অঙ্গাণুটি বিভিন্ন প্রকারের এনজাইম ও কো- এনজাইম উত্পন্ন করে থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়া প্রোটিন সংশ্লেষনের প্রয়োজনীয় এনজাইম ধারণ করে থাকে। এটি প্রয়োজনে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটিয়ে কাজে সহায়তাএবং স্নেহ বিপাকে অংশ গ্রহণ করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মাইটোকন্ড্রিয়া ছাড়া জীবকোষের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়ে কোষ নিস্তেজ অর্থাত্ প্রাণহীন মৃত হয়ে পড়বে। আর কোষের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেলে এক সময় জীবের মৃত্যু ঘটবে। এজন্য মাটোকন্ড্রিয়া ছাড়া জীবকোষের অর্থাত্ সকল জীবদেহের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।