মো. মমিনুল ইসলাম
একবার এক যুবক মহান দার্শনিক সক্রেটিসকে বলল স্যার, সাফল্য লাভের উপায় কী? অর্থাত্ আমি কিভাবে সফল হব। সক্রেটিস যুবকটিকে বলল, আগামীকাল তুমি অমুক নদীর তীরে আমার সঙ্গে দেখা করো। ঠিক সময়ে সক্রেটিস আর যুবকটি নদীর তীরে উপনীত হলেন। সক্রেটিস যুবককে বললেন, আমাকে অনুসরণ করো। এ বলে সক্রেটিস পানিতে নেমে পড়লেন। বুকসমান পানিতে নেমে পড়ার পর সক্রেটিস কিছু না বলেই যুবকটির ঘাড় ধরে তাকে পানিতে ডুবিয়ে দিলেন।
যুবকটি যতবারই তার মাথা পানির উপর তোলার চেষ্টা করছে সক্রেটিস তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরছেন। অতঃপর অক্সিজেনের অভাবে যখন যুবকটির চেহারা নীলবর্ণ হতে শুরু করল তখন সক্রেটিস তাকে ছেড়ে দিলেন। খানিক পর সক্রেটিস যুবকটিকে বললেন, যতক্ষণ তোমার মাথা পানির নিচে ছিল ততক্ষণ তুমি আকুলভাবে কী চেয়েছিলে? যুবকটি বলল—আমি অক্সিজেন চেয়েছিলাম। সক্রেটিস বললেন, তোমাকে ঠিক এভাবেই সফলতা চাইতে হবে। তবেই তুমি সফল হবে।
এছাড়া সফলতার কোনো পথ বা পদ্ধতি নেই। আমাদের দেশের তরুণদের অনেকেই বলতে শোনা যায় আমি কীভাবে সফল হব? বা সাফল্য লাভের উপায় কী? ইত্যাদি, ইত্যাদি। তাদের জন্য উপর্যুক্ত ঘটনাটি উপলব্ধি করা এবং তা মেনে চলা একান্ত অত্যাবশ্যকীয় ও অপরিহার্য হবে। বস্তুত সফল হতে গেলে তীব্র আগ্রহ থাকতে হবে এবং তা গভীরভাবে চাইতে হবে। আমরা অনেকেই আমাদের জীবনে সফলতা চাই এবং সুউচ্চ ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখি। যেমন, অনেক কিছু করব এবং অনেক কিছু হব ইত্যাদি। আর কল্পনার রাজ্যে সুউচ্চ ক্যারিয়ারের বড় বড় চেয়ারে বসি আর ভাবি তা কতই না সোজা। কল্পনার রাজ্যে ঐসব চেয়ারে বসা যতটা সহজ বাস্তবে ঐসব চেয়ারে বসা ঠিক ততটাই কঠিন। তবে কঠিন বটে কিন্তু অসম্ভব নয়। অসম্ভব নয় তাদের জন্য যারা স্বপ্ন দেখে জেগে জেগে এবং এ স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে যায় নিজের সঙ্গে।
প্রতিদিন চেষ্টা করে যায় নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে। তাদের কম্পিটিটর তারা নিজেই। স্বপ্ন তো সবাই দেখে কিংবা সফলতাও তো সবাই চাই। কিন্তু আমরা কয়জন সফল হই। সবাই সফল হয় না কারণ, সবাই সফলদের মতো ধৈর্য ও অধ্যবসায়ী হয় না এবং সফলদের মতো হাল ধরে রাখতে পারে না। অনেকে নতুন উদ্যম দিয়ে কোনো কিছু শুরু করে বটে কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই হাল ছেড়ে দেয়। এই ভেবে যে, সফলতার পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং তা অনেক দীর্ঘ। কিন্তু যারা হাল ছাড়ে না লেগে থাকে তারাই হয় সফল আর সাফল্যের জয়মুকুট তাদের মাথায়ই উঠে। দেখুন, আপনি সফল হতে চাইবেন আবার সাফল্যের পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং দীর্ঘ বলে হাল ছেড়ে দিবেন তা কি করে হয়। কেননা সফলতা ও ব্যর্থতার আনন্দ একসঙ্গে পাওয়া যায় না।
তা ছাড়া আপনি সফল হতে চাইবেন আবার প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন কিংবা অন্য কোনো অকাজে মানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকিং করবেন। আপনার স্ট্যাটাসে কে কী কমেন্ট করল, তার জবাবে কী রিপ্লাই দেওয়া যায় কিংবা কীভাবে সেলফি উঠিয়ে আপলোড দিলে লাইক বেশি পাওয়া যাবে বা ম্যাসেঞ্জারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করে সময় নষ্ট করবেন আবার স্বপ্নও দেখবেন সফল হওয়ার তা কী করে হয়? জানেন কি দুই জিনিস একসঙ্গে পাওয়া যায় না। যেমন: সকালে ঘুমানো আর ভোর দেখার আনন্দ। এছাড়া পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জ্ঞানী আর নির্বোধ এক নয়, কিংবা চক্ষুষ্মান ও অন্ধ’ আর আমরা যারা সময় নষ্ট করি তারা কি জানি যে সময় নষ্ট করা মানে জীবনকেই ধ্বংস করা, কেননা সময় নদী গোপনে বয়ে চলে। তাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন ‘সময় কোথায়, সময় নষ্ট করার’।
সুতরাং সফল হতে গেলে প্রথমে আপনাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে যে আপনি কী চান? কেননা লক্ষ্য বিহীন জীবন ঠিকানাবিহীন চিঠির মতো। আপনি নিজেই যদি না জানেন যে আপনার জীবনের লক্ষ্য কী তাহলে আপনার জীবনের রেলগাড়ি কোন স্টেশনে পৌঁছবে? অতএব লক্ষ্য নির্ধারণ করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তবেই সফলতা উঁকি দিবে আমাদের কুঁড়েঘরে। তবে মনে রাখবেন বিশ্বখ্যাত সংগীতশিল্পী এ. আর. রহমানের এ কথাটি ‘সফল হতে গেলে অর্থ আর খ্যাতির মোহ ত্যাগ করতে হবে’। সবার জন্য শুভ কামনা।