• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন

চিতলমারীতে দাম না পাওয়ায় টমেটো চাষীদের মাথায় হাত॥ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো

আপডেটঃ : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

“ভাই দুঃখের কথা কি কব? নিজের ছোয়াল-ম্যাইয়ের চেয়ে বেশী যতœ করিছি। দিনরাত নাওয়া-খাওয়া বাদদিয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ওই টমেটা ফলাইছি।কিন্তু লাভ হলো কি এখন তার কোন দাম নাই।এক ড্রাম টমেটা (আড়াই মন) টমেটা মাত্র ১শ টাকা। ক্ষেত থেকে ছিঁড়ে ভ্যানে বাজারে নেয়ার ভাড়ার টাকাই হয় না। -সোমবার বিকেলে চিতলমারীর টমেটো চাষি রেজাউল খান, সুরশাইল নিজের ক্ষেতে বসে আক্ষেপ করে এমনটাই জানালেন”।
ক্ষোভে, দুঃখে ও কষ্টে চাষিরা ক্ষেত থেকে টমেটা তুলছে না। এভাবে এ উপজেলার হাজার হাজার মন টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।’ স্থানীয় কৃষি অফিস ও এলাকার চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, চিতলমারী সদর, চরবানিয়ারী ও সন্তোষপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ আবাদি-অনাবাদি জমি ও চিংড়ি ঘেরের পাড়ে এ বছর ব্যাপক ভাবে টমেটোর চাষ করা হয়েছে। অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরের পাড় জুড়ে দৃষ্টিনন্দন টমেটোগাছে প্রচুর ফলন ধরেছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের এ টমেটোর থোকায় নুইয়ে পড়েছে ডালপালা। প্রথমদিকে বাজারে টমেটোর ব্যাপক চাহিদা ছিল। তখন প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দেশের নানা স্থানে ট্রাক যোগে চালান হয়েছে এসব টমেটো।
শ্রীরামপুর গ্রামের টমেটো চাষি শেখর ভক্ত, বিমল মন্ডল, কালশিরার বিকাশ মন্ডল, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, সুরশাইলের মুন্না শেখ, খড়মখালীর পরেতোষ মজুমদার, ক্ষিতিষ, লিটন সিংহ, কুরমুনির রেজাউল দাড়িয়া, বুদ্ধ বসু, শচীন বিশ্বাস, মুনচুর আলী, জামাল ফরাজী, কৃষ্ণ মালি, হরে কৃষ্ণ বিশ্বাস, জগো মন্ডল, পরিমল বিশ্বাস ও নিহার পালসহ অনেক চাষি প্রায় অভিন্নসুরে জানান, উপজেলার প্রতি এলাকার টমেটো গাছে প্রচুর টমেটো রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ৫০/৫৫ টাকা প্রতিমন হওয়ায় চাষিরা ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন না। যার ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার মন টমেটো।
ঢাকার টমেটো ব্যবসায়ী হারুন শেখ জানান, দক্ষিনাঞ্চলের সবজি ও টমেটোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে রাজধানীতে। পুরো মৌসুমে এখান থেকে কয়েক হাজার ট্রাক টমেটো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা কম ও রাস্তা খারাপের জন্য ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় টমেটোর দাম কমে গেছে।
খড়মখালী গ্রামের টমেটো চাষি মুক্তিযোদ্ধা মনি মোহন হীরা, আলমগীর তরফদার, পরিমল মজুমদার ও  গৌর মজুমদার জানান, এ অঞ্চলের টমেটো দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটায়। প্রতিবছর এখানে কয়েক লাখ টন টমেটো উৎপাদিত হয়। টমেটো ফলাতে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। আর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ফলা টমেটো এ অঞ্চলের চাষিদের মুখে হাসি ফোঁটায়। কিন্তু সেই হাসির মাঝে অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে দরপতন।
এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, এ বছর উপজেলায় এক হাজার ৬০৫ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ করা হয়েছে। প্রথম দিকে এখানে প্রতিমন টমেটো তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে দরপতনে চাষিরা বিচলিত হয়ে পড়েছে। তবে এখানে হিমাগার থাকলে চাষিদের এ লোকসান হতো না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ