ইহা সত্য যে, ভূপৃষ্ঠের ৭০ শতাংশই পানি। কিন্তু সুপেয় পানির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ শতাংশ। অন্যদিকে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের সুপেয় পানির অভাব রহিয়াছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ চাহিদার তুলনায় বিশ্বে সুপেয় পানির সরবরাহ ৪০ শতাংশ কম হইবে। যদিও এই সুপেয় পানির অভাবের কারণ রহিয়াছে একাধিক। এবং তাহা একেকটি শহরে একেক ধরনের। তবে সকল শহরের জন্য একটি সাধারণ কারণ হইল—জলবায়ুর পরিবর্তন। সপ্তদশ শতকের প্রারম্ভ হইতে যে শিল্পবিপ্লব শুরু হয়, মূলত তাহার পর হইতেই অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাইতে শুরু করে পৃথিবীর তাপমাত্রা। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি একটা সময় মানুষের চিন্তার পরিধির মধ্যেই ছিল না। বিশ্বের আবহাওয়া সংস্থা বলিতেছে, সর্বশেষ বরফ যুগের তুলনায় ৭০ বত্সর ধরিয়া ১০০ গুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মিশিতেছে। বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, এই গ্যাসসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের দ্রুতবৃদ্ধি বিশ্বের জলবায়ুতে কল্পনাতীত পরিবর্তন আনিতেছে। ইহার প্রতিঘাতে বাস্তুসংস্থান ও অর্থনীতিতে পড়িতেছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব। ব্রিটেনের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘দ্য ল্যানসেট’ গত বত্সর জানাইয়াছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু হইতে পারে ১০০ কোটির বেশি মানুষ। এইদিকে বিশ্বব্যাপী দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত বত্সর আর্থিক ক্ষতি হইয়াছে ১২৯ বিলিয়ন ডলার। গত মাসে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঙ্গোলিয়া (ইউইএ) এবং চীনের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র বিজ্ঞানীরা ২৭টি বিশ্ব জলবায়ু মডেলের ওপর গবেষণার ভিত্তিতে দাবি করিয়াছেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার মাত্র দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাইলেই শুষ্ক হইয়া যাইতে পারে এক-চতুর্থাংশ পৃথিবী। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর তলানিতে নামিয়া যাইবে এবং বাতাসের আর্দ্রতাও কমিয়া যাইবে বহুগুণ। গবেষকদের মতে, ইতোমধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাইয়াছে আরো এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইতিপূর্বে একটি গবেষণা রিপোর্টে দেখা গিয়াছে, এশিয়ার ৪৯টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে অবস্থানকারী আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
সমপ্রতি ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ জার্নালে প্রকাশিত এই রিপোর্ট হইতে জানা যায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমাইয়া আনা সম্ভব হইলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রকোপ হইতে এখনো বাঁচানো যাইতে পারে এই পৃথিবীকে। দুর্যোগ কাহারো একার জন্য আসিবে না। একটিই ছাদ এই ধরিত্রীর। সুতরাং এই বিপদ হইতে রক্ষা পাইতে যাহা করণীয়, তাহা আগামীতে নহে, করিতে হইবে এখনই।