• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩

আম আহরণ নিয়ে শঙ্কা জাগাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগের পূর্বাভাস

রাজশাহী জেলায় গাছ থেকে পাকা আম আহরণ শুরু হচ্ছে আজ। কিছুদিনের মধ্যেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাকা আম পাড়া শুরু হয়ে যাবে। ফলন আহরণের এ মুহূর্তে এখন আশঙ্কার বড় কারণ হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস। দুর্যোগের অভিঘাতে বিপুল পরিমাণ আম গাছেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতবৈচিত্র্য ও আঞ্চলিক আবহাওয়ার ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আম পাকার সময়ে ভিন্নতা দেখা যায়। এর ভিত্তিতে বিভিন্ন জেলায় আলাদা পাড়ার সময়সূচি বা ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। সারা দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম সংগ্রহের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয় মে মাসে। কয়েকটি জেলা এরই মধ্যে আম পাড়ার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের হিমসাগর ও গোপালভোগ এবং রাজশাহী জেলার গোপালভোগ ও ল্যাংড়া সংগ্রহ করা হয়। তৃতীয় সপ্তাহে যশোর ও কুষ্টিয়ার হিমসাগর সংগ্রহ করা হয়। আর মে মাসের শেষ সপ্তাহে সাতক্ষীরা, যশোর ও মেহেরপুরের ল্যাংড়া, ঝিনাইদহ ও দিনাজপুরের হিমসাগর এবং কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোপালভোগ সংগ্রহ করা হয়।

কিন্তু মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এখন কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় হলে সে সময় গাছে থাকা পাকা আম ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তা কোথায় আঘাত হানবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিশ্চিত হতে আরো দু-একদিন লেগে যেতে পারে।

দেশে আম উৎপাদনে শীর্ষ জেলাগুলোর একটি মেহেরপুর। এখানে আমের বাগান রয়েছে ২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে। জেলার কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর তীব্র তাপদাহে ছোট ছোট আম ঝরে পড়েছে। তবে ঝরে পড়লেও এবার ফলন বেশি হয়েছে। যদিও তাপদাহের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমের আকার ছোট হয়েছে।

মেহেরপুরের সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের বাগান মালিক টিপু মোল্লা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমের পরিপক্বতা আসেনি। এদিকে দেখা দিয়েছে ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা। বুঝতে পারছি না এখন আমাদের কী করণীয়। ঝড়ে যদি আম ঝরে যায় তাহলে গত বছরের মতো এবারো লোকসানের মুখে পড়ব আমরা। কারণ আমগুলো এ মুহূর্তে পাকানো সম্ভব নয়। স্থানীয় বাজারে আচার খাওয়ার জন্য বিক্রি করা গেলেও খুব বেশি পরিমাণ বিক্রি হবে না। আমাদের লোকসান গুনতে হবে।’

বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘অনেকদিন বৃষ্টি না হওয়ার ফলে হঠাৎ একদিন বৃষ্টি হলে আম ঝরে পড়ে। তাছাড়া আমের সাইজ খুব ছোট বলে মনে হয়নি এখন পর্যন্ত। তবে আরো সময় আছে দেখা যাক কী অবস্থা হয় । আর ৮ মে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলার কৃষক, কৃষি অফিস ও আম ব্যবসায়ীসহ আমাদের একটি আলোচনা রয়েছে। সেখানে আমাদের আম নিয়ে কী করণীয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের কথা বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সাধারণত গুটি জাতের আম বিভিন্ন জেলায় মে মাসের শুরু থেকেই পাড়া শুরু হয়। তবে আম কর্তনের জন্য আলাদা ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে থাকে জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় আমচাষীরা আম পাড়া শুরু করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু হচ্ছে। গতকাল রাজশাহী জেলা প্রশাসন ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ ঘোষণা করে। রাজশাহীর নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী আজ থেকে সব ধরনের গুটি জাতের আম পাড়া যাবে। ১৫ মে থেকে গোপালভোগ, ২০ মে থেকে লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ও রাণীপছন্দ এবং ২৫ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাতি হাটে তুলতে পারবেন বাগানমালিক ও চাষীরা। আর ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ১০ জুন আম্রপালি, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, গৌড়মতী ও বারি আম-৪ এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতী আম পাড়া যাবে। তবে কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করতে পারবেন চাষী ও বাগান মালিকরা।

জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ রয়েছে। এবার জেলায় ৯৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এখান থেকে এ বছর মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাত্র শোনা যাচ্ছে। অনেক সময় ঘূর্ণিঝড় গতিপথও পরিবর্তন করে থাকে। সে হিসেবে যদি আমরা ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে নিশ্চিত হই, তাহলে অবশ্যই কৃষকদের সুবিধা অনুযায়ী আম পাড়ার জন্য নির্দেশনা দেব। যেটা সব সময় সব ফসলের ক্ষেত্রেই দেয়া হয়ে থাকে। ধানের ক্ষেত্রেও কোনো দুর্যোগের বিষয়ে জানলে আগে থেকে ফসল কর্তনের উপযোগী হলে আমরা সেটা কেটে ফেলার নির্দেশনা দিয়ে থাকি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ