• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন

মুক্তিপণ আদায়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালাতো তারা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ৬ মে, ২০২৩

কক্সবাজারের টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অপহরণ ও মুক্তিপণের মূল হোতা ছালেহ বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে ছলেহ উদ্দীনসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার (৫ মে) রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অভিযানে টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- নুরুল আলম ওরফে নুরু (৪০), আক্তার কামাল ওরফে সোহেল (৩৭), নুরুল আলম ওরফে লালু, হারুনুর রশিদ (২৩) ও রিয়াজ উদ্দিন ওরফে বাপ্পি।

এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি, দেশিয় তৈরি ৩টি একনলা বড় বন্দুক, ২টি একনলা মাঝারি বন্দুক, ৬টি একনলা ছোট বন্দুকসহ মোট ১১টি দেশিয় তৈরি বন্দুক, ১৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৪ রাউন্ড খালি কার্তুজ, ২টি ছুরি ও ৬টি দেশিয় তৈরি দা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে তারা অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। সালেহের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলটি টেকনাফের শালবাগান পাহাড়, জুম্মা পাড়া ও নেচারি পার্ক এলাকা, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া পাহাড়, বড় ডেইল পাহাড়, কচ্ছপিয়া পাহাড়, জাহাজপুরা পাহাড়, হলবনিয়া পাহাড়, শিলখালী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। কখনও অটোরিকশার চালক এবং কখনও সিএনজিচালক হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন কৌশলে তারা কক্সবাজারের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শ্যামলাপুর, জাদিমোড়া ও টেকনাফ ইত্যাদি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের টার্গেট করে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতি করত।

আরও জানা যায়, হাফিজুরের নেতৃত্বে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া এলাকা থেকে ১০ জন কৃষক, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শরণার্থী রেজুয়ানা, ২৬ মার্চ ন্যাচারাল পার্কের দর্শনার্থী হ্নীলার দদমিয়ার বাসিন্দা কবির আহাম্মদের ছেলে রিদুয়ান সবুজ (১৭) ও একই এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আবুল কালামের ছেলে নুরুল মোস্তফা (১৬), ১৫ এপ্রিল ফুলের ডেইল এলাকা থেকে বাবুল মেম্বারের ছেলে ফয়সাল (১৭), ৩০ এপ্রিল হামিদুল্লাহ (২৪) এবং ৩ মে রোহিঙ্গা আবুল কালামকে অপহরণ করে। পরে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়।

উল্লেখ্য, তারা অপহৃত ব্যক্তি প্রতি ৫-১০ লাখ টাকা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে কম-বেশি মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ব্যক্তির ওপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার কারণে মুক্তিপণের অর্থ প্রদান করে ফেরত আসা অধিকাংশই অপহরণকারীদের সম্পর্কে অভিযোগ দিতে বা মুখ খুলতে ভয় পেত।

ছালেহ বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০১২ সালে সে অবৈধপথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যায় এবং তৎকালীন সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজসে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরে ২০১৯ সালে সে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করে। এ সময় অপহরণ-ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম করে আসছিল ছালেহ উদ্দিন। ছালেহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠনের জন্য ১২/১৫ জন সদস্য নিয়ে বাহিনী গঠন করে। সে দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে অপহরণ, ডাকাতি, ও মাদক চোরাচালান কার্যক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মানবপাচার করত বলে জানায়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আক্তার কামাল হাফিজুরের অন্যতম সহযোগী। সে অপহরণের পরিকল্পনা এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছালেহ’র নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করত। এছাড়াও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় ১০ এর অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

হাফিজুর রহমানের আরেক সহযোগী নুরুল আলমের বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্র, মাদকসহ ৬ এর অধিক মামলা রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ