বরিশালের মুলাদী উপজেলার জয়ন্তী নদী থেকে উদ্ধার হওয়া অর্ধগলিত মরদেহ প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের (৪৬)।
স্বজনরা এরইমধ্যে মরদেহ শনাক্ত করেছেন।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়েছে।
মরদেহ বুঝে নেওয়ার আগে কুশলের বড় ভগ্নিপতি একিউএম জিয়াউল হক জুয়েল জানান, পরিবারের তেমন কারো সঙ্গেই কুশলের কথাবার্তা হতো না, তবে মায়ের সাথে কথা বলতেন।
তিনি জানান, ২০ বা ২১ অক্টোবর সকালে মায়ের সঙ্গে কথা বলে বাসা থেকে বের হন কুশল। তখন তিনি জানান, তার নতুন একটি চাকরি হওয়ার কথা। এরপর আর বাসায় ফেরেননি। পরে সোমবার (৩০ অক্টোবর) পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন কুশলের মরদেহ বরিশালের মুলাদী উপজেলাধীন জয়ন্ত নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কুশলের মৃত্যু নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি জানিয়ে জুয়েল বলেন, ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে যদি মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন কিছু উঠে আসে, তাহলে অবশ্যই পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত কুশলের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি, পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুরাইন কবরস্থানে বাবা ও বড়ভাইয়ের পাশেই তার দাফন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
বরিশালের পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, খুলনায় চাকরিতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হওয়া কুশলের মরদেহ কীভাবে বরিশালে পাওয়া গেল, তা নিয়ে পরিবারের সদস্যরাও দ্বিধায় রয়েছেন। তবে তারা এখনও কোনো হত্যা মামলা বা লিখিত অভিযোগ থানায় দেননি। পুলিশ অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
এটিএম খালেকুজ্জামান কুশল প্রয়াত চলচিত্র অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে হওয়ায় তার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কুশলের সর্বশেষ অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখব। কোনো অসঙ্গতিমূলক কিছু পেলে এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে অবশ্যই পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার আশপাশের কোথাও মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদেরও প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। মৃত্যুর পর মরদেহটি ভাসতে ভাসতে বরিশালে এসেছে হয়তো।
অন্যদিকে কুশলের মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেফায়েতুল ইসলাম বলেন, অর্ধগলিত থাকায় মরদেহের শরীরের তেমন কোথায় আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করা যায়নি, তবে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কোনো অসঙ্গতি থাকলে প্রতিবেদনে উঠে আসবে।
জয়ন্তী নদীর নাজিরপুর ইউনিয়নের নাসির হাট নিজাম তালুকদারের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় মরদেহটি ভাসছিল। স্থানীয়রা বিষয়টি নৌ পুলিশকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে মুলাদী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
মুলাদী নৌ-পুলিশের পরিদর্শক মো. হাবিব জানান, চার-পাঁচদিন ধরে মরদেহটি নদীতে ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির পরনে শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট ছিল। পকেট থেকেই একটি জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়া যায়। যেখানে কার্ডটি এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের বলে উল্লেখ করা ছিল। পাশাপাশি ঢাকার সূত্রাপুর থানার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনের ৪৬ নম্বর বাসার ঠিকানা দেওয়া ছিল কার্ডে।
কার্ডের সূত্র ধরেই ঢাকার সূত্রাপুর থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে জানিয়েছেন মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, সূত্রাপুর থানা পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহটি প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট কুশলের বলে নিশ্চিত হই। তারপর তারা মুলাদী থানায় এসে মরদেহ শনাক্ত করেন।
সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মুলাদী থানার ওসি বিষয়টি জানানোর পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কুশলের মা জানিয়েছেন, ২১ অক্টোবর খুলনায় চাকরি হওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। দুইদিন পর তার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। তিনি কোথায়, তাও জানাননি। তিনি যে নিখোঁজ ছিলেন, তা পরিবারও জানত না বলে জানিয়েছে।
২০১২ সালে চলচ্চিত্র অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীরকে হত্যার ঘটনায় ২০১৪ সালে ছোট ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর থেকে পরিবারের কারো সঙ্গেই তেমন যোগাযোগ ছিলো না কুশলের। সম্প্রতি তিনি জামিনে বাইরে ছিলেন বলে জানা গেছে।