নাশকতার অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলার সাত থানায় মোট ১৩টি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় ছয়টি নাশকতা মামলা করা হয়। মামলাগুলোর একটিতে আসামির তালিকায় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আরিফুল ইসলামের নাম। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে তাকে দলের নেতা বলে দাবি করা হয়েছে।
আরিফুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের কোষাধ্যক্ষ। তিনি আলামপুর ইউনিয়নের স্বস্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার সদরের আলামপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মঞ্জুরুল ইসলাম কুষ্টিয়া মডেল থানায় নাশকতার ওই মামলাটি গত ৬ নভেম্বর রাতে দায়ের করেন। এতে ৮ নম্বর আসামি আশরাফুলের সাথে ১৪ নম্বর ক্রমিকে আসামি করা হয়েছে তার ভাই ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আরিফুল ইসলামকে। এ মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরো ২০/৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ইমরান হোসেন বাপ্পী নামের একজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসুচি চলাকালীন গত ৫ নভেম্বর রাতে সদর উপজেলার ভাদালিয়া বাজারে অবস্থান করছিলেন মামলার বাদি আলামপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মঞ্জুরুল ইসলাম। এসময় তিনি খবর পান একদল মানুষ কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বালিয়াপাড়া বাসষ্টান্ড মোড়ে মশাল এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে গিয়ে বাদি দেখতে পান কয়েকজন সড়ক অবোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করছে। এসময় পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করলে পিকেটাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ইমরান হোসেন বাপ্পী নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোষাধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম জানান, আমি সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোষাধ্যক্ষ। দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন ষড়যন্ত্র করে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের আইসিকে ম্যানেজ করে নাশকতার মামলায় আমার নাম জড়িয়ে দিয়েছে। আমার ভাই বিএনপির কর্মী হলেও তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সে ঢাকায় থাকে আর আমি থাকি গ্রামের বাড়ি স্বস্তিপুরে।
আরিফুলের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকি বলেন, আরিফুল আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী। তার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। প্রতিপক্ষের লোকজন ষড়যন্ত্র করে মামলায় ফাঁসিয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে আমরা আমাদের নেতাদের সাথেও কথা বলেছি।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ইলিয়াস খান বলেন, আরিফুল সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোষাধ্যক্ষ। তিনি অনেক পুরোনো এবং একনিষ্ঠ কর্মী। আরিফ গত দুই সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের পোলিং অ্যাজেন্ট ছিলেন। তিনি কোনোভাবেই নাশকতার সাথে জড়িত নয়। সেখানকার স্থানীয়ভাবে গ্রুপিংয়ের কারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
মামলার বাদি আলামপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি উপ-পরিদর্শক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এই মামলা সম্পর্কে বা এর আসামি কারা তা আমি জানি না। আমি ভাদালিয়া বাজারে অবরোধের ডিউটিতে ছিলাম, আমাকে ওসি স্যার ডেকে মামলার এজাহারে সই করতে বলেন। যেহেতু আমি এই এলাকার আইসি তাই আমাকে মামলার বাদি করা হয়েছে। আরিফুল যে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত তা আগে জানতাম না।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, আমরা যাদের গ্রেফতার করি তাদের কাছ থেকে নাম জেনে আসামির তালিকা করা হয়। আরিফুল জড়িত না হলে তার নাম বাদ দেয়া হবে।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম উল হাসান ও কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: বকুল আলী বলেন, নাশকতার অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলার সাত থানায় মোট ১৩টি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় ছয়টি, দৌলতপুর থানায় দু’টি, মিরপুর একটি, ভেড়ামারায় একটা, কুমারখালী একটা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি এবং খোকসা থানায় একটি নাশকতা মামলা করা হয়। কুষ্টিয়া জেলার প্রত্যেক উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে নতুন নতুন মামলা করা হচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।
তারা আরো জানান, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে জেলার ৩২৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত সহস্রাধিক আসামি করা হয়েছে। নাশকতার ১৩ মামলার এজাহারভুক্ত ৬০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে আর পেন্ডিং মামলায় ৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।