সরকারি আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার কথা বলে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার এক ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে। এক বছর আগে টাকা নিলেও তাদের ভাগ্যে আজও জোটেনি ঘর। উল্টো টাকা চাইতে গেলে হুমকি-ধামকিসহ মামলার ভয় দেখান ওই ইউপি সদস্য।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত জেলা সদরের দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দন মিয়া (৪২)। দুই গ্রামের অন্তত ৩০ জনের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার নাম করে ১৫-২০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণের ঘর দেওয়া কথা বলে ইউপি সদস্য চন্দন শ্রীপুর বালী ও মহিষাটি গ্রামের অন্তত ৩০ জন দরিদ্রের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। তাদের কারো কাছ থেকে ১ লাখ, কারো থেকে ৬০ হাজার করে বেশ কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘর দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতে কিছু টাকা খরচ করে ভুক্তভোগী দুই-একজনের বাড়িতে ইট-বালু ও সিমেন্ট নিয়ে ঘর তৈরির কাজ শুরু করে। অপরিচিত একজনকে সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে সেই ঘর পরিদর্শনও করান তিনি। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিশ্বাস তৈরি হলে আরও অনেকেই ঘর পেতে ইউপি সদস্য চন্দনকে টাকা দেয়। এক পর্যায়ে ঘরের কাজ বন্ধ হলে প্রতারণার বিষয়টি সবাই জেনে যায়। ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিলে কয়েকজনের টাকা ফেরত দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। অন্যদের টাকা আজ-কাল দেওয়া হবে বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। টাকা না দিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীদের হুমকি-ধামকি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেল চন্দন।
সম্প্রতি কয়েকজন ভোক্তভোগী টাকা ফেরত ও প্রতারণার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এরআগে কয়েকজন ভুক্তভোগী একই অভিযোগে আদালতে চন্দন মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
মহিষাটি গ্রামের দিনমুজুর সঞ্জু মিয়া জানান, ছেড়া কম্বলের বেড়া আর পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকি। ভাঙা ঘর বদলাতে স্ত্রী সন্তানের জমিয়ে রাখা ১ লাখ টাকা তুলে দেই স্থানীয় ইউপি সদস্য চন্দন মিয়ার হাতে। এক বছর হয়ে গেলেও সরকারি নতুন ঘর দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে উল্টো হুমকি ধমকি দেয়, মামলার ভয় দেখায়। আমার দুই কুলই শেষ।
শুধু সঞ্জু মিয়াই নয়, তার মতো ওই গ্রামের আরো অন্তত আঠারো জন ঘর পাওয়ার আশায় দিয়েছেন টাকা। নতুন ঘর না পেয়ে ভুক্তভোগিরা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। ঘর কিংবা টাকা চাইলেই দেওয়া হয় হুমকি।
শ্রীপুর বালালী গ্রামের হলুদা বেগম, আব্দুর রাশিদ, রুবেল, বাচ্চু মিয়াসহ অনেকে বলেন, চন্দন মেম্বার আমাদের কারো থেকে ৬০ হাজার কারো থেকে ১ লাখ করে টাকা নিয়েছে। সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু বছর ঘুরিয়ে গেলেও ঘর দেয়নি। এখন টাকা চাইতে গেলে উল্টো মামলার ভয় দেখায়।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য চন্দন মিয়া বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। সবকিছু সাজানো নাটক। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের দিয়ে এসব করাচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।