রংপুর অফিস॥
চলতি বছরের ডিসেম্বরে নয়তো আগামী বছরের জানুয়ারীতে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো রসিকে হতে যাওয়া আসন্ন এই নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে কাজ করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি। এজন্য রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। পোষ্টার-ফেষ্টুন,লিফট সাটিয়েছেন নগরীর প্রধান সড়কসহ প্রতিটি অলি-গলিতে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, পেশাজীবি, পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন বিএনপির নেতারা। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ.মন্দির পরিদর্শনসহ সাধারণ মানুষ জনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্য-সহযোগিতার। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের এমন অব্যাহত গণসংযোগে যুব-ছাত্র সমাজসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষজনের সিটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
মহানগর বিএনপি ও বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, আসন্ন রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে বিএনপির হাফ ডজন নেতা আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন ভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে যেমন ভোট প্রার্থনা করছেন ঠিক তেমনি কেন্দ্রেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তবে দুই-একজন বিএনপি নেতা মেয়র পদে প্রার্থীতা ও ধানের শীষ প্রতীক নিশ্চিত করতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলটির বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীরা জানান। তবে একটি সুত্র জানিয়েছে, টানা একযুগেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিতে চলছে চমকের প্রচেষ্টা। আসন্ন এই নির্বাচনে দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী,সমর্থক এবং নগরবাসীর মুখে মেয়র পদে প্রায় হাফডজন বিএনপির নেতার নাম বারবার উঠে আসছে। সেই তালিকায় রয়েছেন রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল ইসলাম মিজু, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি কাওছার জামান বাবলা, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম ও জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু।তবে মনোনয়ন পেলে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনতে দলের সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চান তারা। রংপুর মহানগরীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ার স্বপ্ন বুনছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা।
রংপুর জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু জানান, আমি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি পছন্দ করি। একারণেই সিটি নির্বাচন করতে চাই। দল মনোনয়ন দিলে রংপুরের মানুষের ভালো কিছু করতে পারো।
অন্যদিকে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, মেয়র পদে লড়তে কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আমি সমর্থন ও নির্বাচিত হলে রংপুরকে তিলোত্তমা নগরী এবং একটি আধুনিক সিটিতে পরিণত করবো।
মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি কাওসার জামান বাবলা বলেন, বিগত ২০১২ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে আমি আনারস প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহন করেছিলাম। সেবার ২৫ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। এবার আমার অবস্থান অনেক ভালো। প্রচারও আমি অনেক আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছি। দলের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন চাইব, আশাকরি দল নিরাশ করবে না। এসময় তিনি নির্বাচিত হলে রংপুর মহানগরীকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নিরাপদ নগরী হিসেবে সাজাতে কাজ করবেন বলে জানান।
এদিকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু জানান, আগের চেয়ে রংপুর মহানগর বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ইতিমধ্যে রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে বিএনপির বিপুল সংখ্যক সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কারমাইকেল কলেজের সাবেক জিএস মিজু জানান, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল চাইলে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করতে প্রস্তুুত আছি।
অপরদিকে মহানগর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন জানান, রংপুরে বিএনপিকে শক্ত অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সিটি নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দলের ইচ্ছাই সব, তবে আমি মনোনয়নপ্রত্যাশা করছি। এসময় তিনি বলেন, বিএনপিতে বিরোধ নেই, তাই অন্যদের মতো প্রার্থীর ছড়াছড়িও নেই।
উল্লেখ্য, রংপুর সিটি করপোরেশনে বর্তমানে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৯৬টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৭টি। ২০১২ সালে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন।