• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন

আত্মসমর্পণের পর দুই মামলায় খালেদার জামিন

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরার পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া জামিনের আবেদন করলে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এক লাখ টাকার মুচলেকায় তা মঞ্জুর করেন।

খালেদার পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, আবদুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলী ও সানাউল্লাহ মিয়া। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনে তার আইনজীবীরা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে বুধবার দেশে ফিরে বৃহস্পতিবারই আত্মসমর্পণের জন্য আদালতে এসেছেন।

অন্যদিকে জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, খালেদা জিয়া জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করে বিদেশে গিয়েছিলেন। তাকে আবার জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।

শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করে আদেশে বলেছে, ভবিষ্যতে মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া আবারও বিদেশে যেতে চাইলে তাকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী নূরুজ্জামান তপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অপর দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদের জামিন আবেদন এদিন নাকচ করেছে আদালত।

আগের জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১২ অক্টোবর একই বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসার কথা জানিয়ে গত ১৫ জুলাই লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাড়িতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কোরবানির ঈদ করেন তিনি।

খালেদার বিদেশে অবস্থানের মধ্যেই নাশকতা ও মানহানির চার মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে; যার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, “ওয়ারেন্ট ইস্যুটা অনেকটা রাজনৈতিক প্রভাবে ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য হয়েছে বলে আমি মনে করি।”

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে হাজির না থাকায় গত ১২ অক্টোবর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

আর স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি করার অভিযোগে আরেক মামলায় সমন জারির পরও আদালতে না আসায় ওই দিনই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার মহানগর হাকিম নূর নবী।

তার আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুই বছর আগে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় গত ৯ অগাস্ট খালেদা জিয়াসহ ‘পলাতক’ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

সানাউল্লাহ মিয়া জানান, খালেদা জিয়া রবৃহস্পতিবার কেবল জজ আদালতের দুই দুর্নীতি মামলাতেই জামিনের আবেদন করেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আমানুল্লাহ আমানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এতিমখানা দুর্নীতি মামলা

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক।

তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে এবং মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ কারাগারে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আছেন লন্ডনে। আর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুদক।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায়।

আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না পলাতক। এছাড়া ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান জামিনে রয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ