বৃহস্পতিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠান তিনি জানান, এই মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম পর্যায়ের ৫৫০টি অ্যাপার্টমেন্টের ভিত্তিস্থাপন করবেন।
৬৫০ বর্গফুটের এই অ্যাপার্টমেন্টগুলো রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হবে। আগের প্রকল্পে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হলেও এবার তা ভাড়া দেওয়া হবে।
এর আগে ২০০৩ সালে বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ফ্ল্যাটে তুলতে ভাষানটেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সরকার। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাটের দাম ঠিক করা হয়েছিল দুই লাখ টাকা, নিম্নবিত্তদের জন্য তিন লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী নর্থ সাউথ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (এনএসপিডিএল) ফ্ল্যাটগুলো বিত্তবানদের কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ ওঠার পর ২০০৯ সালে ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সরকার।
এরপর বস্তিবাসীকে চিহ্নিত করে অ্যাপার্টমেন্টে ওঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহায়ন মন্ত্রণালয় নিলেও গত জুলাই মাসেও বস্তিবাসীরা সংবাদ সম্মেলন করে টাকা দিয়েও ১০ বছরে ফ্ল্যাট না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন।
তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন আয়োজিত ‘গৃহায়ন অর্থায়ন মেলার’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মোশাররফ বস্তিবাসীদের জন্য নতুন পরিকল্পনা হাজির করেন।
তিনি বলেন, “আমরা ৬৫০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট করতেছি। আলাদা টয়লেট ও বাথরুমের ব্যবস্থা করতেছি। বেসিনটাও আলাদা জায়গায় করা হবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটরও থাকবে।
“এই অ্যাপার্টমেন্টে ৪ থেকে ৫ জন থাকতে পারবে। ভাড়া নিচ্ছি মাত্র ৮ হাজার টাকা। এটা দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে দিতে পারবে।”
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় এই ১০ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
ঢাকার সবচেয়ে বড় কড়াইল বস্তি
এই প্রকল্প গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বস্তিবাসীদের এই সমস্যা জিইয়ে রাখা ঠিক হবে না। তারা মানবেতর জীবনযাপন করতেছে। বস্তিতে ঘর ভাড়া তারা দেয়। বিদ্যুতের সংযোগের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, আবার বিদ্যুৎ বিলও দেয়; সেভাবে পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দেয় ও পানির বিলও দেয়।”
সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারি উদ্যোগে অ্যাপার্টমেন্ট করার নানা উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ।
“ইতোমধ্যে আমরা আট হাজার অ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তর করেছি। পাইপলাইনে আছে আরও ১৫ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট। আমরা এগুলো বিভিন্ন জায়গায় করতেছি।”
অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে নিজস্ব স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ও সোলার সিস্টেম থাকার কথাও জানান তিনি।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মতো পরিবেশবান্ধব ও মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট তৈরিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
“যারা ডেভেলপার তাদেরকে বলব, আপনারা দেখে আসেন। আপনারা ওই পানি খেতে পারবেন। সুতরাং ইট ইজ পসিবল ইফ ইউ ওয়ান্ট।”
ভবন নির্মাণে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পৃথিবীর কোথাও বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণের সুদ ৪ শতাংশের বেশি নাই। আমাদেরও বাংলাদেশে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ইউনুসুর রহমান, কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শেখ আমিনউদ্দিন আহমেদ, রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল ও সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবু সাদেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবাসন ঋণের নানা রকমের অফার নিয়ে তিন দিনব্যাপী এই মেলায় অংশ নিচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।