রাঙামাটি সদর থেকে ৭৬ কিলোমিটার দূরে লংগদুর ভাসান্যাদম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দুই শতাধিক কৃষকের নামে মিথ্যা ঋণ বিতরণ দেখিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে লংগদু উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী শতাধিক কৃষক।
জানা যায়, আজ থেকে এগারো বছর আগে স্থানীয় হেলাল, সেলিম ও মিষ্টি কালাম মিলে একটি দালাল চক্র দুর্গম ভাসান্যাদম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সরকারি অনুদানের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ছবি সংগ্রহ করেন। তারপরে ব্যাংক ঋণের বিভিন্ন কাগজপত্রে কৃষকদের স্বাক্ষর নেন। পরবর্তী ধাপে কিছু কিছু কৃষকদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে দালালচক্র। বিনিময়ে কৃষকদের নামে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ বরাদ্দ নিয়ে নেয় কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও দালালচক্রটি।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, ২০১২ ও ২০১৩ সালে স্থানীয় হেলাল, সেলিম, মিষ্টি কালামসহ কয়েকজন দালাল সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নেন। এখন এত বছর পরে আমরা ঋণের বিষয়টি জানতে পারি। সম্প্রতি আমাদের নামে নোটিশ দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, আমাদের নামে যে ভুয়া ঋণ হয়েছে তার বড় প্রমাণ এনআইডি কার্ডে জালিয়াতি। কার্ডে উল্লিখিত নাম, জন্ম তারিখ, পিতা ও মাতার নামের অংশ ঠিক রেখে পেছনে ঠিকানার অংশ পরিবর্তন করে মাইনীমুখ ইউনিয়নের সোনাই এলাকার করা হয়েছে। যেটা আমাদের সঠিক ঠিকানা না। এভাবে আমাদের ২১৮ জন কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা করে মিথ্যা ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়েছে।
কৃষক আইন উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকার ২১৮ জনের নামে ভুয়া ঋণের তালিকা পেয়েছি। যারা কেউ ঋণ নেয়নি। এখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নানাভাবে আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ দিচ্ছে। কারও অ্যাকাউন্টে স্বজনরা টাকা পাঠালে সেখান থেকে ঋণের টাকা কেটে রেখে দেয়। আমরা দরিদ্র কৃষকরা সঠিক সমাধান চাই এবং জড়িতদের শান্তির দাবি জানাই।
লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও দালাল চক্র মিলে আর্থিক অনিয়ম করেছে। এই ঋণের বোঝা দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব না। বিষয়টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করি কর্তৃপক্ষ সঠিক তদন্ত করে সমাধান করবেন।
এ বিষয়ে লংগদু উপজেলা শাখার সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু বলা সম্ভব না।