• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বলিউড তারকা কারিনাকে ‘বয়স্ক’ বলে বিপাকে পাকিস্তানি অভিনেতা ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে: মির্জা ফখরুল শিক্ষার্থীদের পিকনিক বাসের ধাক্কায় মিনিবাসের দুই যাত্রী নিহত কীভাবে ঢুকল আরও ৬০ হাজার রোহিঙ্গা যে ব্যাখ্যা দিলো পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সহ-সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী দুই দিন ধরে নিখোঁজ হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারে দুদকের অনুসন্ধান শুরু মালাক্কায় আন্তর্জাতিক হালাল ফেস্টিভাল’এ বাংলাদেশ হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন এবার যা যা নিয়ে এলো পাকিস্তানি সেই জাহাজে দিল্লির সব স্কুলে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ

অবৈধভাবে পরিচালিত গরুর হাট বন্ধ॥ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ইজারা বন্ধের দাবী

আপডেটঃ : রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭

অব্যবস্থাপনায় ধ্বংসের মুখে এনায়েতপুর কাপড়ের হাট

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি॥ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ক্ষুদ্র তাঁত-কাপড় ব্যবসায়ীদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত “এনায়েতপুর কাপড়ের হাটটি নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ধ্বংসের উপক্রম হয়েছে। ইজারাদারের মদদপুষ্ট ভূমিদস্যু দ্বারা একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, কাপড়ের হাটের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গরুর হাট পরিচালনা করাসহ বিভিন্নভাবে ক্ষুদ্র তাঁতীদের অত্যাচার করার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকালে গরুর হাট বন্ধ, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ইজারা বন্ধের দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছে এনায়েতপুর হাট তাঁত-কাপড় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড। লিখিত আবেদনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার মোতাবেক তাঁত কাপড় ব্যবসায়ীদের অনুকুলে বেসরকারী উদ্যোক্তা কর্তৃক নির্মিত দোকান বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ প্রার্থনা করেছে ক্ষুদ্র তাঁত ব্যবসায়ীদের ওই সমিতি। একই সাথে গরুর হাট বন্ধ ও ইজারা বন্ধ করে ভুমিদস্যুদের অত্যাচার থেকে ক্ষুদ্র তাঁত ব্যবসায়ীদের রক্ষার দাবীও জানানো হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ক্ষুদ্র তাঁতী ও তাঁত কাপড় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ২০০৬ সালে চৌহালী উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রমিন্যান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেডের অর্থায়নে প্রায় ৪০/৫০ ফুট গভীর খাদ ভরাট করে হাটের অভ্যন্তরে সোনালী ব্যাংক চালূকরনসহ এনায়েতপুর হাটের কলেবর বৃদ্ধি করা হয়। দেশ-বিদেশের কাপড় ব্যবসায়ীগন যেন এই হাটে এসে নির্বিঘেœ কাপড় ক্রয় করতে পারেন। স্থানীয় ক্ষুদ্র তাঁত ব্যবসায়ীরা যাতে প্রকৃত নায্য মুল্যে কাপড় বিক্রী করে ব্যবসা করতে পারে সেই লক্ষে প্রমিন্যান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেডের অর্থায়নে অবকাঠামো তৈরি করে প্রায় ১০ হাজার শেড নির্মাণ করতঃ দেশের বৃহত্তম কাপড়ের হাট নির্মান করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।
উল্লেখ্য ওই সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার অনুযায়ী এনায়েতপুর হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রমিন্যান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেডকে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেবে মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয়। একই বছর হাটটি পেরিফেরি অর্ন্তুভূক্ত হবার পর থেকে ইজারাদারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। আর তখন থেকেই নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে এ হাটটি। ভূমিদস্যু, দাদন ব্যবসায়ীরা যোগসাজসে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ক্ষুদ্র তাঁত কাপড় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রমিন্যান্ট টেক্সটাইলসকে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেয়া হয় না।
বাধ্য হয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রমিন্যান্ট টেক্সটাইলসকে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাবার লক্ষ্যে ২০১২ সালে জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে ৫শ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবী করে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে।
প্রসঙ্গত: হাটটির ইজারা প্রদানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সিভিল রুল (এফএম২০১২) সঙ্গে এফএমটি ৪৫৮/২০১২ হাইকোর্টে শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা স্বত্বেও এনায়েতপুর হাটটি ধ্বংসের লক্ষে বিভিন্ন মহলের অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে  একই ব্যক্তি নিজ নামে কিংবা অন্য কারো নামে ইজারা গ্রহণ করে অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে।
হাটে আগত ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাটটির ইজারা গ্রহণ করে কয়েকটি অংশে ভাগ করে সাব-লিজ প্রদান করে আসছেন ইজারাদার। প্রকাশ্যে সরকারী টোলচার্ট না টাঙিয়ে সাধারণ গরীব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টোল আদায় করে আসছে।
এছাড়াও কাপড়ের হাটের জায়গায় অবৈধভাবে গরুর হাট লাগিয়ে তাঁত কাপড় ব্যবসায়ীদের নানা অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। গরুর মলমূত্র, উচ্ছিষ্ট খাবারের কারণে তাঁত-ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। একাধিক তাঁতীরা জানান, সিরাজগঞ্জ যমুনাপাড়ের এতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের প্রতি দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি বিশাল তাঁত কাপড় বিপনন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এই হাট নির্মান কাজ শুরু করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে একাধিক তাঁত ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, কাপড়ের হাটে গরুর হাট লাগানোর কারণে আমরা বিড়ম্বনায়  পড়েছি। এতে হাটের পরিবেশ মারাত্বকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই এ হাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন দুর-দুরান্তের ক্রেতারা। ফলে এলাকার তাঁত ব্যবসায়ী ও তাঁতী সম্প্রদায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
স্থানীয় তাঁত ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান, শুধু গরুর হাটই নয়, হাটের মধ্যে প্রভাবশালীর অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। দোকান, দলীয় কার্যালয় এমনকি বাড়িঘরও নির্মাণ করছে তারা। ফলে হাটের পরিবেশ সম্পূর্ণরূপে ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে।
এনায়েতপুর হাট তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি নজরুল ইসলাম জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদনে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারের আলোকে বিনিয়োগকারী কোম্পানী কর্তৃক নির্মিত ১০ হাজারটি দোকান থেকে প্রাপ্ত সেলামির ২৫% ও ভাড়ার ৩০% অর্থ রাজস্বখাতে জমা এবং ইজারা প্রদান ও গরুর হাট বন্ধের দাবী জানিয়েছেন। এতে করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকারের ঘরে জমা হওয়ার পাশাপাশি ইজারাদার ও ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাবে তাঁত কাপড় ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, আমরা লিখিত আবেদন হাতে পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ