বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের পশুর নদীতে ৯৫০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি ইশরা মাহমুদ নামের একটি কার্গো জাহাজ শনিবার দুপুরের দিকে ডুবে গেছে। এ সময় ওই জাহাজে ১১ জন স্টাফ-কর্মচারী থাকলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তারা সকলে নিরাদদে সাঁতরে কূলে ওঠেন। ধারণক্ষমতার বেশি বোঝাইয়ের কারণে ফাটল ধরে পানি ঢুকে ধীরে ধীরে কার্গোটি ডুবতে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডুবে যাওয়া জাহাজটি থেকে সঙ্গে সঙ্গেই কয়লা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে কার্গোটি পশুর নদীর বন্দরের মূল চ্যানেলের অনেক বাইরে চরে ডোবায় চ্যানেল নিরাপদ থাকায় বাণিজ্যিক জাহাজ ও নৌযান চলাচল স্বাভাবিক অছে।
ডুবন্ত কার্গো জাহাজের মাস্টার কাজী কামরুল ইসলাম জানান, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়ীয়ার ৬ নম্বর অ্যাংকোরেজে থাকা মার্শাল আইল্যান্ড পতাকাবাহী বিদেশি জাহাজ এমভি প্যারাস থেকে কয়লা বোঝাই করে কার্গো জাহাজটি। পরে যশোরের নওয়াপাড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথিমধ্যে পশুর নদীর বানীশান্তা নোঙ্গরে অবস্থানরত কার্গোটি অতিরিক্ত বোঝাইয়ের ফলে তলা ফেটে পানি উঠে একদিকে কাত হয়ে যায়। এরপর পানি উঠতে থাকলে দ্রুত জাহাজটি চালিয়ে বানীশান্তা নোঙ্গর থেকে ছেড়ে চরকানা চরে উঠিয়ে দেওয়া হয়। চরে উঠিয়ে দেওয়ার পরও সেখানে ধীরে ধীরে জাহাজটি ডুবে যায়।
এ সময় জাহাজে থাকা ১১ স্টাফ-কর্মচারী দ্রুত সাঁতরিয়ে কূলে উঠে প্রাণে বাঁচেন। এর পরপরই ডুবে যাওয়া এমভি ইশরা মাহমুদ কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা অপসারণ করে পাশের একটি বার্জে (নৌযান) সরিয়ে নিচ্ছেন মালিকপক্ষ।
মাস্টার কামরুল বলেন, শুক্রবার রাতে বিদেশি জাহাজ থেকে কয়লাবোঝাই করে কার্গোটি রাতেই বানীশান্তা নোঙ্গরে রাখা হয়। মূলত অতিরিক্ত ড্রাফটের (ধারণক্ষমতার বেশি) বোঝাইয়ের কারণে শনিবার বেলা ১১টার দিকে তলা ফেটে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মাস্টার কামরুল আরও বলেন, কয়লা বোঝাইয়ের বিদেশি জাহাজের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলের বোট নোট পাইনি এখনও। তাই কী পরিমাণ কয়লা বোঝাই হয়েছিল তা সঠিক বলতে পারছি না। তবে এ জাহাজের ধারণক্ষমতা ১ হাজার মেট্রিক টন। ধারণা করা হচ্ছে ৯শ থেকে সাড়ে ৯শ কিংবা তার চেয়ে কম-বেশি লোড হয়ে থাকতে পারে। তবে অতিরিক্ত লোড/ড্রাফট হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মো: মাকরুজ্জামান বলেন, কয়লা নিয়ে কার্গো জাহাজটি পশুর নদীর চরে ডুবে যাওয়ায় বন্দরের মূল চ্যানেল নিরাপদ ও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। এ দুর্ঘটনার পরও পশুর চ্যানেলে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিকসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে একই জায়গায় ৮শ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে তলা ফেটে এমভি প্রিন্স অব ঘাষিয়াখালী নামে একটি কার্গো জাহাজ গত বছরের ১৭ নভেম্বর ডুবে যায়।
কয়লা নিয়ে জাহাজডুবির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের পশুর নদীতে একর পর এক কয়লা জাতীয় দাহ্যপদার্থের জাহাজ ডুবির ঘটনা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য খুব হুমকীর। এ কয়লা জোয়ার-ভাটায় নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ে জলজপ্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হবে।’