• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়ে যুক্তরাজ্যকে ধোঁকা দিয়েছে পেন্টাগন

আপডেটঃ : রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

সাদ্দাম হোসেনের কাছে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই জানার পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটা যুক্তরাজ্যের কাছে গোপন করেছিল। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেন, ইরাকের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে গোপন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন কখনো যুক্তরাজ্যকে দেয়া হয়নি।
ব্রাউন তার নতুন বই ‘মাই লাইফ, আওয়ার টাইমস’ নামক বইয়ে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এমন অভিযোগে ইঙ্গ-মার্কিন জোট ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দাম সরকারকে উৎখাত করে। ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী সহিংসতায় দেড় লাখের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্য এবং ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের পরে সেই সহিংসতার জেরে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সৃষ্টি হয় ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। গর্ডনের মতে এর সবকিছুর শুরুটা যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য গোপন করে যুক্তরাজ্যকে যুদ্ধ জড়ানোর মধ্য দিয়ে।
ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের যুক্ত হওয়ার কারণ বিষয়ে তদন্তের জন্য গর্ডন ব্রাউন ২০০৯ সালে চিলকট তদন্ত কমিশন গঠন করেন। ২০১৬ সালে প্রকাশিত এই কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্য তখনই ইরাক আক্রমণে যোগ দেয় যখন নিরস্ত্রীকরণের সব সুযোগ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই ধুয়ো তুলে ইরাক আক্রমণে ব্রিটেনকে যুক্ত করেন।
ব্রাউন তার বইয়ে লিখেন, ২০০৩ সালের মার্চে যুদ্ধে যাওয়ার তাড়াহুড়ো ছিল। সেই সময়ে টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ব্রাউনকে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্স বারংবার ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কথা নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু গর্ডনের বিশ্বাস গণবিধ্বংসী  অস্ত্রের  বিষয়ে তাদের সবাইকে ধোঁকা দেয়া হয়েছিল।
ইরাক যুদ্ধের আগের বছর ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে সেই সময়ের মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেলডের নিয়োজিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদন ২০১৬ সালে ফাঁস হয়। ব্রাউন সেই নথির বরাতে বলেন, এতে পরিষ্কার যে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এর সপক্ষে প্রমাণ ছিল দুর্বল, গুরুত্বহীন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে একদম সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এটা বিস্ময়কর যে ব্রিটিশ সরকারের কেউ এই প্রতিবেদনটি দেখেনি।
গর্ডন লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয় যে ইরাকের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এই তথ্যের ৯০ শতাংশ ভিত্তি অনির্দিষ্ট গোয়েন্দা বিশ্লেষণ। এই ধারণাটি নিখাদ প্রমাণের পরিবর্তে আনুমানিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়।
গর্ডন বলেন, সেই প্রতিবেদনে বলা হয় ইরাকি সেনাবাহিনীর হাতে (রাসায়নিক অস্ত্র) নার্ভ এজেন্ট তৈরি করার রসদ নেই কারণ মার্কিন গোয়েন্দারা এই উপাদান প্রস্তুতের কোনো সাইট খুঁজে পায়নি।  সেই মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এটা নিশ্চিত করা হয় যে ইরাকের কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না এবং সেটা তৈরির সক্ষমতাও ছিল না।
ব্রাউন বলেন, যদি সেই গোয়েন্দা প্রতিবেদন যুক্তরাজ্যকে দেয়া হত তাহলে ইতিহাসটা ভিন্ন হতে পারত। সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বসম্মতিক্রমে বিভিন্ন প্রস্তাব নেয়া হচ্ছিল এবং তিনি সেটা মানতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার যৌক্তিকতা ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে ২০০৩ সালের মার্চে যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল কী না। আমি যদি ভুল না হয়ে থাকি আমেরিকান সরকারের ভেতরের লোকজন জানতো যে ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই। এরপর আমাদের শুধু ভুল তথ্যই দেয়া হয়নি, গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়ে আমাদের ধোঁকা দেয়া হয়েছে।
এই তথ্যগুলোর ভিত্তিতে ব্রাউন বলেন, যেহেতু ইরাকের ব্যবহার উপযোগী কোনো রাসায়নিক, জীবাণু কিংবা পারমাণবিক অস্ত্র ছিল না যা তারা মিত্র জোটের উপর হামলা করতে ব্যবহার করবে। তাই এটা বলা যায় যে ন্যায্য যুদ্ধের দুটি শর্তই এখানে পূরণ হয়নি। ইরাক যুদ্ধকে শেষ অবলম্বন বলে এর যৌক্তিকতা সৃষ্টি করা যাবে না, ইরাক আক্রমণ এর যথাযথ জবাব বলে বিবেচিত হতে পারবে না। গার্ডিয়ান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ