কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড় ও বনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আতঙ্কে রয়েছেন। দুর্যোগকালে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সেখানে ভূমিধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার সকাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার কিছু জায়গায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়া দেখা দিয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্যাম্পে ভলান্টিয়ারসহ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এ বিষয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪-এপিবিএনের এসপি মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘নিরাপদ ও সতর্ক থাকতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া ক্যাম্পে দাতা সংস্থা সেন্টারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ রোহিঙ্গার বসতি পাহাড়ি এলাকায়। তাই ভারী বর্ষণ হলে ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা ফায়ার সার্ভিসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তা ছাড়া পরিস্থিতি দেখে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হবে।’
এদিকে, ভূমিধসপ্রবণ এলাকা হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গাক্যাম্পগুলো, পাহাড়বেষ্টিত এই অঞ্চলে মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গার বসবাস। এখানকার ঘরগুলো ত্রিপল, বাঁশের কাঠামোতে তৈরি। ক্ষতি কমাতে ইতোমধ্যে ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে করা হচ্ছে মাইকিং।
উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. নাছির বলেন, ‘যারা পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তুলেছে, তারা ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে ভূমিধসের ভয়ে আছেন। আর যারা নিম্নাঞ্চলে থাকছেন, বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের মাঝেও। তাছাড়া মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে।’
এই দুর্যোগে ভয়-ভীতির সৃষ্টি হয়েছে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে। উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমার বাড়ি পাহাড়ের নিচে। আগেও বৃষ্টির কারণে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ মাইকিং চলছে, ভয়ে আছি, জানি না কী হবে?’
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ক্যাম্পে স্কুল, ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। বিশেষ করে, ক্যাম্পে এপিবিএন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনী, বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মীসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। এ ছাড়া ক্যাম্পে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। তিন হাজারের বেশি ভলান্টিয়ার প্রস্তুত আছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘ক্যাম্প প্রশাসন ও কর্মরত সহযোগী সংস্থাগুলোর সমন্বিত চেষ্টায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
তবে টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আন্তজার্তিক এনজিও এবং আমরা ক্যাম্পে মাইকিং করছি, সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। বিশেষ করে, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের পাশের স্কুল এবং খাদ্য বিতরণ সেন্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।’
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত আনতে পারে, এমন খবর ক্যাম্পে প্রচার করা হচ্ছে। ক্যাম্প পাহাড়ের পাশে এবং ঝুপড়ি ঘর হওয়ায় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপদ স্থানে আশ্রয় না নিলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।’
স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত মসজিদ, লার্নিং সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগে অবহেলা না করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য মাইকিংসহ নানাভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’