• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

লোকজন দেখলেই আঁতকে উঠে, বলছে ‘আমাকে আর মারবেন না’

চুরির অপবাদে ১১ বছরের শিশুকে দিন ভর নির্যাতন, হারিয়েছে মানসিক ভারসাম্য

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪
নির্যাতনকারীদের একজন ইয়াছিন আরাফাত, তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে ১১ বছরের এক শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে শিশুটি এখন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। কেউ সামনে গেলেই ‘মারবেন না’ বলে চিৎকার করে উঠছে।

এই ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইয়াছিন আরাফাত (২৪) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল আদালতে পাঠায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেউলভোগ সবুজহাটি এলাকার ইমান আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া কাঠমিস্ত্রি সাগর হাওলাদারের ছেলে নাহিদকে (১১) মোবাইল ফোন চোর অপবাদ দিয়ে গত ২৪ জুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাসার সামনে থেকে একই এলাকার মোস্তফা জামানের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত, তার বন্ধু রিয়াদ, শাহাদাৎ, শিহাবসহ বেশ কয়েকজন মিলে ধরে নিয়ে যায়। ইয়াছিন আরাফাত ও তার লোকজন মিলে নাহিদকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গাছের ডাল ও বাঁশের লাঠি দিয়ে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে নাহিদের বাবা-মা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গেলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তারা মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য নাহিদকে উলঙ্গ করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। গ্যাস লাইটের আগুনে চাবি গরম করে শরীরের বিভিন্নস্থানে ছ্যাঁকা দেয়।

তারা দিনভর নাহিদকে আটকে রেখে নির্যাতন করতে থাকে। নাহিদের বাবা-মা অস্থির হয়ে বেশ কয়েকবার ছেলে উদ্ধারের জন্য ইয়াছিনদের বাড়িতে গিয়ে হাতে পায়ে ধরলেও তাদের মন গলেনি। রাত ৮টার দিকে ফের নাহিদের বাবা সাগর হাওলাদার ছেলেকে আনার জন্য ইয়াছিনদের বাড়িতে গেলে দেখেন সেখানে নাহিদ নেই। পরে রাত ৯টার দিকে স্থানীয়রা নাহিদকে সুবজহাটি রাস্তা থেকে উদ্ধার করে তার বাবা-মাকে খবর দেন। নাহিদের বাবা-মা ছেলেকে নিয়ে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাহিদকে ঢাকার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

স্থানীয়রা জানায়, ইয়াছিন আরাফাত, রিয়াদ, শাহাদাৎ, শিহাবসহ এই গ্রুপটি বিএনপি নেতা ইদ্রিস শেখের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় নানা অপকর্ম করে থাকে।

শ্রীনগর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাহফুজা পারভীন চৌধুরী বলেন, মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের কারণে শিশুটি এখন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। কেউ কাছে গেলেই ‘আমাকে আর মারবেন না, মারবেন না’ বলে চিৎকার করে উঠছে। শ্রীনগর উপজেলা সমাজ সেবা অফিস ছেলেটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে।

এই ঘটনায় সাগর হাওলাদার বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে শ্রীনগর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, শিশুটিকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা অমানবিক। পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নিয়ে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ