কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিম্মি করে ‘জোরপূর্বক’ আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করাসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়ক থেকে একটি মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে ফের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ওপর নৃশংস অত্যাচারের বিচার করা, শিক্ষার্থীদের হত্যার পেছনে জড়িতদের অবিলম্বে বিচার করা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গণ-গ্রেপ্তার বন্ধ করা।
সমাবেশে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালানো হয়, ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানো হয়েছে, বাংলাদেশেও স্বৈরাচারী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালিয়েছে। ডিবি পুলিশ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সমন্বয়কদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধ ঘোষণা করিয়েছে, আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা চাই, আগে সকল সমন্বয়কদের মুক্তি দেওয়া হোক, তারপর সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিব।
বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আরেক সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, আমরা একটি যৌক্তিক, ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার করা হোক। মেধাবীদের অধিকার নিশ্চিত করা হোক। একটি সাম্য-ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক। এ আন্দোলন সরকার বা কোনো দলের বিরুদ্ধে ছিল না। কিন্তু পরে আমাদের ওপর ছাত্রলীগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। যার নির্দেশে এগুলো হয়েছে সেই স্বৈরাচারী সরকারকে এর জবাব দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকার ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে প্রতিহত করতে চেয়েছে। এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। যে দেশে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের রামদার সামনে দাঁড়িয়ে, পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে পারে, সে দেশে স্বৈরাচারী কোনো শাসক টিকতে পারে না।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব প্রমুখ।
সমাবেশে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার চাই। আমি চাই, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ঘুমাক, নিরাপদে থাকুক। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসুক, ক্লাসে ফিরে আসুক।