মার্কিন প্রযুক্তিখাতের উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে চায় চীন। সে কারণে অন্য অনেক বিষয়ের মতো দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো আর বিদেশি হার্ডওয়্যার ব্যবহার করতে চায় না। কিন্তু এটা কি আসলেই সম্ভব?
চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ এখনো পশ্চিমের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। চীনা পণ্য দিয়ে এসব প্রতিস্থাপনকে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি। চীন তার সরকারি কর্তৃপক্ষকে আর বিদেশি হার্ডওয়্যার ব্যবহার করতে দিতে চায় না। এর প্রভাব সুদূর প্রসারী হতে পারে। এর ফলে সবশেষে কী হবে এবং কেন এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে?
চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ এখনো পশ্চিমের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। চীনা পণ্য দিয়ে এসব প্রতিস্থাপনকে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি। কিন্তু কেন? মেরিক্সের চীন বিশেষজ্ঞ আন্তোনিয়া হামাইদি বলেন, ‘‘চীন বেশ দীর্ঘ সময় ধরে পশ্চিমা প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন করতে চাচ্ছে, অংশত স্নোডেনের তথ্য ফাঁস এবং মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মার্কিন গোয়েন্দাগিরি নিয়ে সেটি যা প্রকাশ করেছে, সেজন্য।”
কিন্তু কারিগরি-ভাবে এটা কি সম্ভব? হামাইদি বলেন, ‘‘বিশেষ করে গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটগুলো চীনে রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো হচ্ছে এমন ক্ষেত্র, যা নিয়ে এখনো সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি, অবশ্যই, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা পণ্য বাছাই করতে পারে, এমনকি সেগুলো বিদেশি পণ্যের মতো মানসম্পন্ন না হলেও। আপনি যা করতে চান, সেগুলো করতে পারলে হলো।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে? এক শব্দে বললে: টিকটক। মার্কিন সরকারের দাবি হচ্ছে, এটিকে অ্যামেরিকান কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায়, তারা অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না মার্কিনীদের তথ্য চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে যাক।
তারপর রয়েছে এনভিডিয়া। মার্কিন নির্মাতাদের তৈরি সর্বাধুনিক এই চিপ চীনে বিক্রি নিষিদ্ধ। মার্কিন কর্তৃপক্ষ চায় না চীনের কাছে এই সর্বাধুনিক প্রযুক্ত পৌঁছাক। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের শাস্তির মুখে পড়তে পারে। ফিউচারুম গ্রুপের চীন বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল নিউম্যান বলেন, ‘‘চীন যদি মুষ্টিমেয় শতাংশও মার্কিন-ভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর থেকে নিয়ে যেতে পারে, অর্থাৎ চীনে তৈরি সম্ভব এমন সেমিকন্ডাক্টর গড়তে পারে, তাহলে তার অর্থ হবে মার্কিন-ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় (হারানো)।”
কোনো প্রতিষ্ঠানই চীনের লোভনীয় বাজার হারাতে চায় না। নিউম্যান বলেন, ‘‘অবশ্যই আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, মার্কিন কোম্পানিগুলো ধারাবাহিকভাবে মার্কিন সরকার এবং চীনের সাথে ইদুঁর-বিড়াল খেলা খেলছে, যাতে করে তারা নিয়মনীতির ফাঁক গলিয়ে চীনে পণ্য রপ্তানি করতে পারে। পাশাপাশি এটাও বলতে হবে যে, ক্রমাগত চাপের কারণে বিষয়টি ক্রমশ জটিলও হয়ে যাচ্ছে।”
ফলে চীন দ্রুত প্রযুক্তিগত-ভাবে আগাতে চাচ্ছে। দেশটি তার স্টার্টআপগুলোকে কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে, বিশেষ করে বেইজিংয়ের উত্তরে চীনের সিলিকন ভ্যালিতে বিপুল বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কারণ, যার তথ্যপ্রযুক্তি সবচেয়ে শক্তিশালী ভবিষ্যতে তারই সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী থাকবে। ড্যানিয়েল নিউম্যান বলেন, ‘‘আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা-হচ্ছে চীন উন্নতি করছে। আমরা জানি, তারা এজন্য প্রায় সীমা-হীনভাবে বিনিয়োগে আগ্রহী। কারণ, এটি অল্পস্বল্প ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার বিষয় নয়। এটি হচ্ছে, প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাখাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতৃত্ব নেয়ার ব্যাপার। আগামী দুই বা তিন দশক বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে লড়াই করবে বিভিন্ন অর্থনীতি।”
চীন এক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে। কিন্তু দেশটি যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে অগ্রণী ভূমিকা নিতে চায়, তাহলে তাদের তথ্য-প্রযুক্তি পণ্য বিদেশে রপ্তানিতেও সক্ষম হতে হবে। ব্রুগেল ইনস্টিটিউটের চীন বিশেষজ্ঞ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া-হেরেরো বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে, আমরা দুটো বাস্তুতন্ত্রের দিকে যাচ্ছি এবং প্রশ্ন হচ্ছে, চীনের নিজের অর্থনীতির বিপুল বিস্মৃতি, দেশটির আকার ছাপিয়ে এটি কি নিজের মান, এবং পদ্ধতি অন্যত্র প্রয়োগ করতে পারবে? আমি মনে করি, এটা এক বড় লড়াই।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রযুক্তিখাতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো হতে চীনের কয়েক বছর লাগবে।