দূষিত হইয়া পড়িতেছে হাতিরঝিল লেকের পানি। বিভিন্ন পয়ঃবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত হইবার কারণে এই দূষণ ক্রমশ প্রকট হইয়া উঠিতেছে। মূলত লেকের সহিত সংযুক্ত ১০টি বৃষ্টির পানির প্রবাহপথে এই দূষণ ঘটিতেছে বলিয়া জানা যায়। তবে এই ক্ষেত্রে কাওরান বাজার হাতিরঝিল অংশের অবস্থাই অধিক শোচনীয়। এই অংশে কালো কুচকুচে পানির সহিত বহু ভাসমান বর্জ্যের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি এমন যে, এইসকল ভাসমান বর্জ্য পচিয়া তাহাতে বিভিন্ন উদ্ভিদও গজাইয়া উঠিয়াছে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, সোনারগাঁও হোটেলের পিছনের অংশে দীর্ঘদিন যাবত্ কঠিন বর্জ্য আটকানোর বৈদ্যুতিক ছাঁকনি বন্ধ থাকিবার কারণেই মূলত এই অংশে কঠিন বর্জ্যের আধিক্য বৃদ্ধি পাইয়াছে। উপরন্তু লেকটির এই অংশের দুই পাড়ে রহিয়াছে পলিথিনসহ নানা ধরনের স্তূপীকৃত কঠিন বর্জ্যের বিড়ম্বনাও। এমতাবস্থায় লেকটিতে বেড়াইতে আসা দর্শনার্থী কিংবা পথচারীদের নাকে রুমাল চাপিয়াই ঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করিতে হইতেছে।
যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র ও নির্মল পরিবেশের নিমিত্ত ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয় হাতিরঝিল প্রকল্প। সৌন্দর্যবর্ধন কিংবা পরিবেশবান্ধব রাখিবার জন্য প্রকল্পটিতে ইতোমধ্যেই বর্তমান সরকার ব্যয় করিয়াছেন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার দরুন ব্যত্যয় ঘটিতেছে মূল উদ্দেশ্যের। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, হাতিরঝিল লেকটি বদ্ধ না হইবার কারণে ইহাতে আশেপাশের বৃষ্টির পানি আসিয়া পড়ে। তাই লেকটির নান্দনিকতা রক্ষায় কিংবা দূষণরোধে বর্জ্যমিশ্রিত পানিপ্রবাহকে বিকল্প পথে প্রবাহিত করার উদ্যোগ থাকা জরুরি। ওয়াসা কর্তৃক আলাদা পয়ঃনালা করিবার কথা থাকিলেও বাস্তবে এই ব্যাপারে কার্যকরি কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় নাই।
বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজধানীতে নির্মল বিনোদন কিংবা প্রাতঃভ্রমণের জন্য হাতিরঝিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। সুতরাং বহুব্যয়ে নির্মিত এই নান্দনিক জায়গার রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও আরো সক্রিয় হওয়া জরুরি। এই ব্যাপারে তাহারা উন্নত বিশ্বের লেক সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করিতে পারেন। তাহা ছাড়া বৃষ্টির জলপ্রবাহের বিকল্প নালা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত প্রবাহিত জলধারাকে বর্জ্যমুক্ত রাখাও যথাযথ একটি বিকল্প হইতে পারে। ইহার পাশাপাশি এই ব্যাপারে লেক-সংলগ্ন জনগণ ও লেক-ভ্রমণকারীদের সচেতন থাকিতে হইবে। ইহা তাহাদের নাগরিক দায়িত্বেরও একটি অংশ। মনে রাখিতে হইবে, নিজের পরিপার্শ্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখিবার দায়িত্ব সর্বাগ্রে নিজের উপরই বর্তায়।