• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

জনগণের ভাষা পাঠ করিতে হইবে

আপডেটঃ : রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭

ভোগান্তি শব্দটির সহিত সবচাইতে বেশি পরিচিত রাজধানীবাসী। সহনীয় ভোগান্তি লইয়া এখন আর কেহ মাথা ঘামায় না। ভোগান্তি এখন সিঁদুরে মেঘের মতো। ঘরপোড়া গরুর মতো জনগণকে ওই ভোগান্তির মেঘকে ভয় পাইলে তো চলিবে না। সুতরাং পথে নামিবার উপজাত হিসাবে একটু-আধটু ভোগান্তি লইয়া কেহ আর এখন বিচলিত হয় না। কিন্তু ‘ভোগান্তি’র পূর্বে যদি ‘মহা’ বিশেষণটি যুক্ত হইয়া যায়, যদি স্থবির করিয়া দেয় চলাচলের সিংহভাগ সংযোগপথ— তখন নাগরিকের সহ্যের ইলাস্টিক ছিঁড়িয়া যাইবার উপক্রম হয় বটে।

 

সকল সংগঠনই চাহেন জনগণকে ভোগান্তিতে না ফেলিতে। এই জন্য ছুটির দিনে জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়, যাহাতে ভোগান্তি রাখা যায় ন্যূনতম পর্যায়ে। সাধু ভাবনা। কিন্তু বাস্তবতা প্রায়শই ভিন্ন বার্তা দেয়। একটি বিদেশি গল্পের সারাংশ এইরূপ যে, এক ধনী অথচ কৃপণ ব্যক্তি তাহার একজোড়া জুতা বত্সরের পর বত্সর জোড়াতালি দিয়া পরিধান করিতেন। ঘটনার পরম্পরায় একদিন তিনি ওই জুতা জোড়া বাতিল করিতে মরিয়া হইয়া উঠিলেন। জুতা জোড়া তিনি নিক্ষেপ করিলেন আস্তাকুঁড়ে। কিন্তু ঘুরিয়া ফিরিয়া কোনো না কোনোভাবে ওই দুই পাটি জুতা তাহার ঘরেই ফেরত্ আসিতে লাগিল। যতই তিনি মরিয়া হইয়া উঠিলেন ওই জুতা ত্যাগ করিতে, ততই ওই পুরাতন জোড়াতালিমার্কা জুতা পরিহাসের মতো করিয়া তাহার ঘরে ঠাঁই লইত। পূর্বেই বলিয়াছি, কেহই চাহেন না জনগণের ভোগান্তি হউক। সকলেই ভোগান্তি নামের পুরাতন ‘জুতা জোড়া’ ছুঁড়িয়া ফেলিবার প্রতিজ্ঞা করিয়া থাকেন, কিন্তু বিধি বাম! ভোগান্তি যেন ওই বিদেশি গল্পের ধনকুবেরের জুতার মতো কিছুতেই পিছু ছাড়িতে চাহে না।

 

স্মর্তব্য যে, সাপ্তাহিক দুইটি ছুটির দিনের মধ্যে শনিবারে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই চালু থাকে পূর্ণমাত্রায়। অন্যদিকে চিকিত্সার প্রয়োজনে যাহাদের হাসপাতালে ছুটিবার প্রয়োজন হয়, তাহাদের কাছে কিই-বা দিন, কিই-বা রাত। ছুটি কিংবা কর্মদিবসের মধ্যে কোনো তফাত্ নাই তাহাদের কাছে। এই ধরনের রোগীদের পাশাপাশি রহিয়াছে আরো শত শত মানুষের ব্যক্তিগত জরুরি প্রয়োজন। ছুটির দিনে পথে নামিতে হয় তাহাদেরও। সুতরাং বৃহত্ জনসমাবেশের উপজাত হিসাবে ছুটির দিনেও মহাভোগান্তির শিকার হইতে হয় হাজার হাজার মানুষকে।

 

বৃহত্তর জনসমাবেশের মাধ্যমে সৃষ্ট জনভোগান্তির অবসান ঘটিত, যদি ওই সকল সংগঠক শুনিতে পাইতেন রাস্তার ফুটপাত ধরিয়া পিপীলিকার মতো হাঁটিয়া চলা সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস। যদি শুনিতে পাইতেন বন্ধ হওয়া সড়কের আগের সারিতে স্থবির হইয়া থাকা শত শত যানবাহনের মধ্যকার সাধারণ যাত্রীদের নিজেদের মধ্যকার চাপা ফিসফিস—উষ্মা আর বিরক্ত বচন। বাতাসে ভাসমান জনগণের এই সকল ভাষা পাঠ করিতে হইবে সবাইকে। নচেত্ মুখের বুলিতে ‘ভোগান্তি’ শব্দটি জাদুঘরে যাইবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ