• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

নগরে নারী ও মেয়েশিশুর নিরাপত্তা

আপডেটঃ : সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

নগরে নারী ও মেয়েশিশুরা কতটা নিরাপদ বোধ করেন—তাহার আনুমানিক একটি ধারণা সকলের রহিয়াছে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশনএইড সম্প্রতি এই ব্যাপারে একটি স্পষ্টচিত্র প্রকাশ করিয়াছে। নারীর প্রতি সহিংসতাবিষয়ক তাহাদের একটি গবেষণায় দেখা গিয়াছে, ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। নারীর প্রতি সহিংসতার সামগ্রিক পরিস্থিতি, সহিংসতা প্রতিরোধে আইনি কাঠামোর উপস্থিতি, সহিংসতা নিরসনে বাজেট বরাদ্দের পরিকল্পনা, জেন্ডার সংবেদনশীল নগর-পরিকল্পনা এবং জেন্ডারবান্ধব গণপরিবহন পরিকল্পনা ও নকশা—এই পাঁচটি বিষয়ে কোন দেশ কেমন করিতেছে, সেই তথ্যের ভিত্তি করিয়া এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। আর তাহাতেই বাংলাদেশ সর্বনিম্ন গ্রেড অর্থাত্ ‘ডি’ পাইয়াছে। নগর-পরিকল্পনায় জেন্ডার সংবেদশীলতার বিষয়ে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৩৯ দশমিক ৩২।

নারীর প্রতি সহিংসতা ও মোকাবিলার দিক হইতে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, কঙ্গো, জর্ডান, নাইজেরিয়া, এমনকি জিম্বাবুয়ের চাইতেও খারাপ অবস্থানে রহিয়াছে বাংলাদেশ। গবেষণায় দেখা গিয়াছে, বাংলাদেশের শহরের ৫৪ শতাংশের বেশি নারী সহিংসতার শিকার। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ শতাংশ নারীর মতে, অভিযুক্তকে নহে, পুলিশ অভিযোগকারীকে দোষারোপ করে। অন্যদিকে ৫৭ শতাংশ নারী ধরিয়াই নেন যে, তাহাদের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হইবে না। দেখা গিয়াছে, ৪৯ শতাংশ নারী গণপরিবহনে এবং ৪৮ শতাংশ নারী গণসেবা গ্রহণে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। তাহা ছাড়া গণপরিবহনে নারী হয়রানির শিকার হইলেও প্রতিবাদের সংস্কৃতি এখনো গড়িয়া ওঠে নাই। যদিও প্রতিবেশী নেপাল কিংবা ভারতেরও অবস্থাও খুব ভালো নহে। কিন্তু গবেষণাচিত্র বলিতেছে, আমাদের অবস্থা আরো খারাপ। এই খারাপচিত্র উন্নতির কার্যকর চেষ্টাও খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। এই বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা, আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া, জেন্ডারবান্ধব নগর-পরিকল্পনার অভাব, নারী ও মেয়েশিশুর জন্য সীমিত এবং অনিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থার কারণেই অন্য দেশের চাইতে পিছাইয়া রহিয়াছে বাংলাদেশ। তাহা ছাড়াও বাংলাদেশে সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিত আইন থাকিলেও শুধু যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন নাই। যে আইনসমূহ রহিয়াছে, তাহাতে যৌন হয়রানি বন্ধে সরাসরি কোনো বিধান রাখা হয় নাই। ‘যৌন হয়রানি’ শব্দটিকে কোনো আইনে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় নাই।

নারী ও মেয়েশিশুর নিরাপত্তার ধরন বলিয়া দেয়, একটি দেশ কতখানি অগ্রসর। বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হইতে মধ্যম আয়ের দেশের পথে পা বাড়াইয়াছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হইল, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যে হারে হইতেছে সেই হারে আমাদের মানসিকতার উন্নয়ন ঘটিতেছে না। সুষ্ঠু বিকাশ ঘটিতেছে না আমাদের মননের। রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়ন কেবলই কাঠামোগত ব্যাপার নহে, সংস্কৃতিগতও। সেই মানসিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে আমাদের দৈন্যদশা এইভাবে বহাল থাকিলে বৃহত্তর অর্জনও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ