• শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

ফুটপাত লইয়া ইঁদুর-বিড়াল খেলা!

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

ফের হকারদের দখলে চলিয়া গিয়াছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলির সড়ক ও ফুটপাত। স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করিয়াও লাভ হইতেছে না। অনেক ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকেরাই দখল প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করিতেছে বলিয়া অভিযোগ আছে। মতিঝিলের দিলকুশায় ফুটপাতে পসরা সাজাইয়া বসিয়াছেন হকাররা। কিছুদিন আগেই ফুটপাতগুলি দখলমুক্ত করা হইয়াছিল। নিউমার্কেট-সংলগ্ন চাঁদনি চক মার্কেটের সামনের ফুটপাতটি অসংখ্যবার হকারমুক্ত করা হইয়াছে। কিন্তু অবস্থা পূর্ববত্। ক্রীড়া পরিষদ ভবনের সামনে তোপখানা রোডের ফুটপাতে পথচারীদের চলাচলের কোনো উপায় নাই, ইহা যে ফুটপাত তাহাও বুঝিবার উপায় নাই। এই চিত্র ঢাকার সর্বত্র। আগে ফুটপাত দখল বলিতে শুধু গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম ও ফার্মগেট এলাকা বুঝাইলেও সংক্রামক ব্যাধির মত এখন তাহা ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় ছড়াইয়া পড়িয়াছে। কিছুদিন পরপর ফুটপাত দখলমুক্ত করিতে অভিযান চালায় ঢাকার দুইটি সিটি করপোরেশন। অভিযানের পর ফুটপাতগুলি পথচারীদের চলাচলের উপযোগীও হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পূর্বাবস্থা ফিরিয়া আসে। কীভাবে কী হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই তাহা ভালো জানেন।

বস্তুত, ফুটপাতগুলিকে স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখিতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ কখনোই নেওয়া হয় নাই। রাজধানীর মোট দুই হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অনেকাংশই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দখলে। বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার সমিতির তথ্যানুসারে, বর্তমানে ঢাকা শহরে হকারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার। তাহাদের মধ্যে ৭০ হাজার স্থায়ী ও ৬০ হাজার অস্থায়ী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হইতে সহায়সম্বলহীন মানুষ ঢাকায় কাজের সন্ধানে আসিয়া হকার পেশায় যুক্ত হইয়া পড়ে। উপরন্তু, রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার পাশেই যেসকল দোকান ও আবাসিক ভবন তাহাদের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নাই। ফলে রাস্তার অর্ধেকটা তাহারা দখল করিয়া গাড়ি পার্কিং করিয়া রাখে। দেখিবার কেহ নাই। ফুটপাতে দোকানের ক্ষেত্রে নেপথ্যে ভূমিকা রাখিতেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, দুই সিটির অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিবাজ সদস্য— এমন অভিযোগ নূতন নহে। বিনিময়ে প্রতিটি দোকান হইতে দৈনিক চাঁদা হিসেবে আদায় করা হয় বড় অংকের অর্থ। জানা যায়, কেবল গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন এলাকার ফুটপাতকে ঘিরিয়া মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চাঁদা-বাণিজ্য হয়।

ঢাকার আয়তন অনুযায়ী যেখানে ২৫ ভাগ রাস্তা দরকার, সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ ভাগ, প্রধান সড়ক মাত্র ৩ ভাগ। আর এই ৩ ভাগ প্রধান সড়কের ৩০ ভাগই অবৈধ দখলদারদের কব্জায়, দখলদারদের একটি অংশ হকার। ফুটপাত দখলমুক্ত করিতে হইলে হকারদের পুনর্বাসনের মানবিক দিকটিও ভাবিতে হইবে। রাজধানীর ভাসমান হকারদের পুনর্বাসনে গত ২৫ বত্সরে অন্তত দুই ডজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করিয়াছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। স্রোতের মত হকাররা আসিতে থাকিবে আর তাহারা ফুটপাত দখল করিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করিবে, পুনর্বাসনের দাবি তুলিবে— ইহা বাস্তবসম্মত নহে। একটি স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবিতে হইবে। সাময়িক সমাধান হিসাবে ফুটপাতগুলি চওড়া করিয়া, হকারদের জন্য কিছুটা জায়গা ছাড়িয়া দেওয়া যাইতে পারে। ঢাকার শিশু একাডেমি সংলগ্ন ফুটপাত ইহার উদাহরণ হইতে পারে। সেখানে ফুটপাতের একাংশে অস্থায়ী দোকান আনুষ্ঠানিকভাবেই হকারদের বরাদ্দ দেওয়া হইয়াছে। এইরকম আরো পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ