• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪ অপরাহ্ন

যেকোনো মূল্যে হালদাকে বাঁচাইতে হইবে

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৮

মানুষসৃষ্ট নানা প্রকার দূষণ ও প্রতিবন্ধকতায় বিপন্ন হইবার দ্বারপ্রান্তে দেশের কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রোধ করিয়া রাবার ড্যাম ও স্লুইস গেইট নির্মাণ, যথেচ্ছ বালি উত্তোলন, শিল্প ও আবাসিক বর্জ্যজনিত দূষণ, নদীর পাড় ঘেঁষিয়া অবৈধভাবে গড়িয়া ওঠা ইটভাটার বিরূপ প্রভাবসহ নানাবিধ কারণে নদীটিতে মাছ ও জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটিতেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ৩/৪ মাসে হালদার বিভিন্ন স্থান হইতে ১৫টির মতো ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হইয়াছে। সর্বশেষ গত ৩ ও ৪ জানুয়ারি আরো দুইটি ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হইয়াছে হাটহাজারি উপজেলার হালদার সংযোগ প্রবাহ হইতে। শুধু তাহাই নহে, গত কয়েক বত্সর যাবত্ নদীটিতে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাইতেছে রেণু পোনার উত্পাদনও। জানা যায়, কয়েক দশক আগেও এই হালদা নদী হইতে বত্সরে প্রায় চার হাজার কেজি রেণু পোনা উত্পাদিত হইত, কিন্তু ২০১৬ সালে তাহা মাত্র ১২ কেজিতে নামিয়া আসিয়াছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবনের জন্য কেবল এই তথ্যটিই যথেষ্ট বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে।

এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত এই নদীটির রহিয়াছে নানাবিধ উপযোগিতা। প্রাকৃতিকভাবে দেশের মিঠা পানির মত্স্য উত্পাদনে ব্যাপক অবদানের পাশাপাশি চট্টগ্রামবাসীর প্রাত্যহিক জীবনেও আছে নদীটির বিশেষ প্রভাব। নদী পাড়ের মানুষের কৃষি ও ষাট লক্ষাধিক স্থানীয় অধিবাসীর ব্যবহূত পানি আর সংগৃহীত মাছের ডিম বাবদ প্রতি বত্সর কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদের জোগান দেয় এই নদী। তাহা ছাড়া এই নদীতে কর্ণফুলী, সাংগু, শিকলবাহা ও চাঁদখালি নদীর মাছও ডিম দেয়। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে এই বত্সর মা মাছ নির্ধারিত সময়ে ডিম ছাড়ে নাই। ইহার প্রকৃত কারণ বিশ্লে­ষণ করিয়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন, নদীর বাঁকগুলি কাটিয়া দিবার ফলে নদীর তলদেশে পানির ঘূর্ণনজনিত গর্ত (মাছের প্রজননকালীন আশ্রয়স্থল) সৃষ্টি না হওয়াই মূলত প্রধান সমস্যা। পাশাপাশি নদীর উজানে নির্মিত রাবার ড্যাম ও অকার্যকর হইয়া পড়িয়া থাকা স্লুইস গেইটগুলিও পানির প্রবাহ সচল রাখার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করিতেছে। ফলে কমিয়া যাইতেছে নদীর গভীরতা, জাগিয়া উঠিতেছে চর। সর্বোপরি বর্জ্য নিক্ষেপজনিত দূষণ এবং নির্বিচারে মা মাছ নিধনের মারাত্মক সমস্যা তো আছেই।

বিপন্ন হালদাকে বাঁচাইতে প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় সংবাদ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাহা ছাড়া হালদার বিপন্ন দশার জন্য দায়ী কারণগুলিও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অজানা থাকিবার কথা নহে। ইতিপূর্বে নদীটিকে বাঁচাইবার লক্ষ্যে নানামুখী সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপও গৃহীত হইয়াছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় হইতে প্রদত্ত হইয়াছে সর্বাত্মক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও। এতদসত্ত্বেও কেন নদীটি দিন দিন ইহার স্বাভাবিক প্রবাহ হারাইতেছে এবং মত্স্য প্রজননের অনুপযোগী হইয়া পড়িতেছে তাহার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সর্বাপেক্ষা বেশি প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে হালদার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরাইয়া আনা এবং যেকোনো মূল্যে নদীটিকে বাঁচাইয়া রাখা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ