কক্সবাজারের একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একজন অভিভাবককে হাত-পা বাঁধিয়া পিটাইবার ভিডিও-চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হইয়া পড়ে গত ৭ জানুয়ারি। স্থানীয় একজন লেখকের ফেসবুক টাইমলাইনে প্রকাশিত এই ভিডিও-চিত্র এখন অবধি প্রায় পৌনে ১৭ লক্ষবার দেখা হইয়াছে। শেয়ার হইয়াছে ৪১ হাজারের অধিক। মন্তব্যের সংখ্যা পাঁচ সহস্রাধিক। নির্মম ওই ভিডিও-চিত্রে দেখা গিয়াছে, একজন ব্যক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাটির উপর পড়িয়া আছেন। তাহার চারিদিকে অসংখ্য মানুষ। ঘটনার নেপথ্য সংবাদ প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকসহ প্রধান প্রধান জাতীয় সংবাদপত্রে। জানা যায়, হাত-পা বাঁধা ব্যক্তিটির নাম আয়াত উল্লাহ। তাহার সন্তান কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাহার সন্তান এইবারের পরীক্ষায় গত বত্সরের তুলনায় ফল খারাপ করে। তাহার উপর কোনো ঘোষণা ব্যতীত ওই বিদ্যালয়ের ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বৃদ্ধি করা হয়। এইসকল বিষয়ে কথা বলিতে তিনি ঘটনার দিন স্কুলে গিয়াছিলেন। ইহা লইয়া তাহার সহিত কথা কাটাকাটি হয় প্রধান শিক্ষকের। ইহার জের ধরিয়া কতিপয় শিক্ষক তাহাকে হাত-পা বাঁধিয়া নির্যাতন করেন নির্মমভাবে। আয়াত উল্লাহকে মারধরের ঘটনা কেহ একজন ভিডিও করিলে এবং তাহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াইয়া পড়িলে নিন্দার ঝড় ওঠে দেশজুড়িয়া।
বিস্ময়কর হইলেও সত্য যে, একজন অভিভাবককে হাত-পা বাঁধিয়া নির্যাতন করিবার দৃশ্য অসংখ্য মানুষ প্রত্যক্ষ করিলেও কেহ তাহাকে রক্ষায় আগাইয়া আসে নাই। পরে তাহার চিত্কার শুনিয়া পথচারীরা আসিয়া তাহাকে উদ্ধার করেন। নির্যাতিত অভিভাবক জানান, উক্ত বিদ্যালয়ের অনিয়মের ব্যাপারে সরব হইবার কারণেই তাহাকে এমন নিপীড়নের শিকার হইতে হয়। তাহার মতে, ওই স্কুলে প্রায়শই নানা অনিয়ম হয়। এমনকি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নেও অনিয়মের অভিযোগ রহিয়াছে। ইহা লইয়া অনেক অভিভাবকের মনেই চরম ক্ষোভ রহিয়াছে দীর্ঘদিন ধরিয়া। তবে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলিয়াছেন যে, যেই অভিভাবককে নির্যাতন করা হইয়াছে সেই আয়াত উল্লাহ ওই স্কুলেরই সাবেক ছাত্র। একজন সাবেক ছাত্র তাহার সহিত বেয়াদবি করিবার কারণে তাহাকে এমন শাস্তি দেওয়া হইয়াছে। এই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার অভিভাবক কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করিয়াছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী অভিভাবকের সহিত যে-ধরনের আচরণ করা হইয়াছে তাহাকে কোনো অজুহাতেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলিয়া ধামাচাপা দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বরং অনেকে মনে করেন, দেশের অনেক বিদ্যালয়েই এই ধরনের অনিয়ম এবং ঔদ্ধত্যই এখন নিয়মে পরিণত হইয়াছে।
শিক্ষক ও স্কুল কমিটির নিকট আমরা সবসময়ই ইতিবাচক ভূমিকা আশা করি। শিক্ষকরা যদি অনিয়মে জড়াইয়া পড়েন তাহা হইলে ছাত্রদের নিকট ভুলবার্তা পৌঁছায়। প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু সকলের জন্য, সুতরাং এইক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানবিশেষে যে ধরনের অনিয়মের শিকড় জাল বিস্তার করিয়াছে, তাহা উপড়াইবার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। আয়াত উল্লাহর নিকট আমরা কৃতজ্ঞ, তিনি নিজে নির্যাতিত হইয়া দেখাইয়া দিলেন কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও ঔদ্ধত্য কোন পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছে। এই সকল বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমলে লইতে হইবে।