• রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব ইজতেমা ও আখেরি মোনাজাত

আপডেটঃ : রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৮

রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত ১২ জানুয়ারি শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হইবে আগামী ১৯ জানুয়ারি। আজ রবিবার ঐতিহাসিক বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি হইবে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়া। সকাল ১১টায় বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের প্রাণকেন্দ্র কাকরাইল মারকাযের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি হাফেজ মাওলানা যোবায়ের আহমেদ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করিবেন। বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ এই আখেরি মোনাজাত। প্রকৃতপক্ষে তিন দিনের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান শেষে যাহারা তাবলিগ ও দাওয়াতের কাজে দেশ-বিদেশে চিল্লার জন্য বাহির হইবেন, তাহাদের কল্যাণ কামনায় এই মোনাজাত অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) যখন কোথাও দীনী দাওয়াতের কোনো কাফেলা পাঠাইতেন, তখন তাহাদের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করিতেন। তাহারই ধারাবাহিকতায় ইজতেমা শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। কামনা করা হয় মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ এবং শান্তি। তাই ইজতেমার তিন দিন অংশগ্রহণ করিতে না পারিলেও আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করিবার জন্য সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ উত্সুক থাকেন।
মূলত দোয়া বা প্রার্থনা স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। ইহাকে ইবাদতের সারও বলা হয়।  এই ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন আমার বান্দা আমার নিকট কোনো কিছু চায়, আমি তাহার কাছেই থাকি। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে। তাই তাহাদেরও উচিত আমার আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং আমার উপরই ইমান আনা। আশা করা যায়, ইহাতে তাহারা পাইবে সঠিক পথের দিশা।’ (সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৮৬) আবার সুপ্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রা) হইতে বর্ণিত, নবী করীম (স) বলিয়াছেন, ‘দোয়া ও প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো কিছুই তকদির তথা ভাগ্যের লিখনকে পাল্টাইতে পারে না।’ (তিরমিযি শরীফ) সুতরাং আমাদের বেশি বেশি দোয়া করা প্রয়োজন।
তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস (রহ) ১৯২৬ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লির নিকটবর্তী মেওয়াত এলাকায়  তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন। ইমান ও আমল সম্পর্কে দাওয়াতের এই মেহনত একসময় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম আছে এমন প্রায় প্রত্যেক দেশেই অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা বা সম্মেলন। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে তাবলিগের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৬৬ সালে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত ইজতেমায় ব্যাপক বিদেশি মুসল্লির সমাগম দেখা দিলে তাহা বিশ্ব ইজতেমার মর্যাদা লাভ করে। তখন হইতেই টঙ্গীতে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হইয়া আসিতেছে বিশ্ব ইজতেমা। ইহা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ। তাই প্রতি বত্সর বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্য ও গৌরবের বিষয়। এবার তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় তথা দিল্লি মারকাযের আমিরের বাংলাদেশে আগমন এবং তাহাকে নিয়া এক ধরনের সংকট দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার সফল ও সতর্কভাবেই তাহা মোকাবিলা করিয়াছে। বিশ্ব ইজতেমাও অনুষ্ঠিত হইতেছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে। এইজন্য আমরা মহান আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ