• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন

অপরাধীদের শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করুন

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮

কলেজে যাওয়া-আসার পথে মামাতো বোনকে উত্ত্যক্ত করিত স্থানীয় মাদকসেবী চিহ্নিত বখাটেরা। দিনের পর দিন এই অবস্থা চলিয়া আসিতেছিল। সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাহা জানিতেন। কিন্তু যথারীতি সকলেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করিয়াছেন। ফলে বখাটেরা আরো বেপরোয়া হইয়া ওঠে। গত শুক্রবার একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে তাহারা প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে। ইহার প্রতিবাদ করেন ছাত্রীটির ফুফাতো ভাই স্থানীয় তরুণ ব্যবসায়ী এবং মাদক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সুলতান মিন্টু। পরিণতি হইয়াছে ভয়াবহ। বখাটেরা প্রকাশ্যে পথরোধ করিয়া রড দিয়া নির্দয়ভাবে তাহাকে মারধর করে। গত রবিবার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গিয়াছে প্রতিবাদী এই যুবক। সেই সঙ্গে পিতৃহীন হইয়া পড়িয়াছে তাহার দুই শিশুসন্তান। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের। স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করিয়াছেন। এদিকে সুলতানের মৃত্যুর খবর ছড়াইয়া পড়ার পর এলাকার মানুষ ক্ষোভে উত্তাল হইয়া ওঠেন। কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হইয়া দুর্বৃত্তদের বাড়িঘরে আগুন লাগাইয়া দেন। স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়াদৃষ্টে বুঝিতে অসুবিধা হয় না যে, বখাটেদের বাড়াবাড়ি কোন্ পর্যায়ে পৌঁছিয়াছে। বলা বাহুল্য, এই চিত্র শুধু নারায়ণগঞ্জের নহে। দেশের প্রায় সর্বত্রই প্রায়শ এই ধরনের ঘটনা ঘটিতেছে। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসাবে গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে ঘটিয়া যাওয়া ঘটনাটির উল্লেখ করা যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত সড়কে চার-পাঁচজন সশস্ত্র যুবক ধাওয়া করিয়া নৃশংসভাবে হত্যা করিয়াছে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র আদনানকে। ছুরিকাহত হইবার পরও রক্তাক্ত অবস্থায় মাত্র ১৫ বত্সর বয়সী কিশোরটি প্রাণ বাঁচাইবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছে। কিন্তু কেহ আগাইয়া আসে নাই। কেন আসে নাই নারায়ণগঞ্জের যুবক সুলতানের পরিণতিদৃষ্টে তাহা কিছুটা অনুমান করা যায়।
একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিতেছে। বিশেষ করিয়া কিশোর-তরুণদের একাংশের বেপরোয়া হইয়া উঠিবার উদাহরণ ভূরি ভূরি। পুলিশ কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন সময়ে তাহা স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু যে-বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নহে তাহা হইল, খুন-ধর্ষণ কিংবা অপহরণের মতো গুরুতর কোনো অপরাধ সংঘটিত না করা অবধি কেন তাহাদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? ইহা লইয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনেক। প্রথম এবং প্রধান অভিযোগটি হইল, পাড়া-মহল্লাভিত্তিক এই দুর্বৃত্ত চক্রটি স্থানীয় প্রভাবশালী বা রাজনৈতিক মহলের মদদপুষ্ট হওয়ায় পুলিশ প্রশাসন তাহাদের ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত ঔদাসীন্য প্রদর্শন করিয়া থাকেন। দ্বিতীয় অভিযোগটি হইল, প্রতিকারহীনতার। খোদ চট্টগ্রামেই এই ধরনের একাধিক দৃষ্টান্ত রহিয়াছে। সব চাইতে বড় উদাহরণটি হইল নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। আদনান হত্যার সাড়ে তিন মাস আগে নগরের সদরঘাট থানার নালাপাড়ায় প্রকাশ্যে তাহাকে পিটাইয়া হত্যা করা হয়। কিন্তু ঘাতকরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরেই রহিয়া গিয়াছে। অথচ খোদ পুলিশসূত্রেই জানা গিয়াছে যে, সুদীপ্ত হত্যাকাণ্ডে ৩০ জন অংশ নিয়াছিল। এই অবস্থার আশু অবসান হওয়া দরকার। শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার অপরাধীদের। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সেই সামর্থ্য আছে তাহা আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ