• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

বিদ্যালয় ভবনগুলির এই জীর্ণদশা কেন?

আপডেটঃ : রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের জরাজীর্ণতা লইয়া আমরা বহুবার সম্পাদকীয় লিখিয়াছি। ভবন না থাকায় বা তাহা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কত শিক্ষার্থী যে খোলা আকাশের নিচে অথবা জীবনের ঝুঁকি লইয়া পড়াশুনা করে, তাহার ইয়ত্তা নাই। এই সংক্রান্ত সচিত্র সংবাদ প্রায়শ পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়। ইহা হইতে একটি সাধারণ প্রশ্ন উঠিতে পারে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি নির্মাণে কি কোনো ত্রুটি থাকে? এইসকল ভবন কেন মেয়াদের আগেই জরাজীর্ণ হইয়া পড়ে? উল্লেখ্য যে এলজিইডি নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। অভিযোগ রহিয়াছে যে, এই সংস্থার নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি আয়ুষ্কালের অর্ধেক না যাইতেই ব্যবহার অনুপযোগী হইয়া পড়িতেছে। পলেস্তারা খসিয়া পড়িতেছে। বাহির হইয়া পড়িতেছে ছাদ ও পিলারের রড। ছাদ দিয়া বৃষ্টির পানি পড়িতেছে। এইসকল সমস্যা যে আমাদের টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক তাহা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

অবশ্য এই ব্যাপারে এলজিইডির নিজস্ব বক্তব্য রহিয়াছে। তাহাদের মতে, এই সংস্থা গত ২২ বত্সর ধরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের সহিত জড়িত। অতীতে অর্থ সংকটের কারণে সঠিক নিয়মে বিদ্যালয় নির্মাণ করা সম্ভব হয় নাই। তাহাছাড়া অঞ্চলভেদে ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত ভিন্নতাও দায়ী বলিয়া তাহারা মনে করেন। এইজন্য ভূমিকম্পপ্রবণ, সাইক্লোনপ্রবণ ও উপকূলীয় এলাকায় তিন রকম নকশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হইয়াছে। তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করার ক্ষেত্রে আবহাওয়া কিংবা নকশাগত ত্রুটিই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নহে। ভবনগুলি নির্মাণে প্রায়শ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। ভবন নির্মাণের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না করিয়াই ভুয়া-বিল ভাউচার দিয়া অর্থ উত্তোলনেরও দৃষ্টান্ত রহিয়াছে। জানা যায়, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় একটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের চার বত্সর না যাইতেই তাহা ঝুঁকিপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। মূলত সিডিউল মোতাবেক কাজ না করা এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটি ঘটিয়া থাকে। রডের বদলে যদি বাঁশ ব্যবহার করা হয়, তাহা হইলে তাহার পরিণতি যাহা হইবার কথা বাস্তবে তাহাই হইতেছে। এখন এই জাতীয় ক্ষতির দায়-দায়িত্ব কে নেবেন? নির্মাতা সংস্থা হিসাবে এলজিইডিকেই প্রথমত ইহার দায়ভার নিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের অনিয়ম স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চোখের সম্মুখেই ঘটিতেছে। তাহারা যদি ইহা দেখিয়াও না দেখিবার ভান করেন কিংবা অনিয়মকারীদের সহিত যোগসাজশ রক্ষা করিয়া চলেন, তাহা হইলে তদন্তসাপেক্ষে তাহাদের বিরুদ্ধেও যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রহিয়াছে। এইসকল ভবন দ্রুত মেরামত বা পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিতে হইবে। যেইসকল এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নাই, সেখানে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্কুল নির্মাণ করিতে হইবে। বিনামূল্যে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর নিকট পাঠ্যপুস্তক বিতরণসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য একেবারে কম নহে। ইহার ধারাবাহিকতা রক্ষা করিতে হইলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যা অবশ্যই দূর করিতে হইবে। কঠোর হইতে হইবে সর্বপ্রকার অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ