অবশেষে চলতি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ হইতেই সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে উপাচার্যগণ একমত হইয়াছেন। ফলে অবসান ঘটিতে চলিয়াছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এবং তাহাদের অভিভাবকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও অবর্ণনীয় উদ্বেগের। উদ্বেগের কারণটি সুবিদিত। বর্তমানে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেশের এক প্রান্ত হইতে আরেক প্রান্তে ছুটিতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। সারা রাত ক্লান্তিকর বাস কিংবা ট্রেন ভ্রমণের পর কোনো বিশ্রাম ছাড়াই ছুটিতে হয় একের পর এক পরীক্ষার হলে। সব চাইতে অধিক দুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়িতে হয় নারী শিক্ষার্থীদের। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘুম হারাম হইয়া যায় তাহাদের অভিভাবকদেরও। বিড়ম্বনার এইখানেই শেষ নহে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় একই দিনে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে। এমনকি সকালে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়া বিকালে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। যানজট কিংবা অন্যবিধ বিড়ম্বনার কারণে বহু পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দিতে না পারার উদাহরণও একেবারে কম নহে। এইভাবে টানা দেড়-দুই মাস ধরিয়া শিক্ষার্থীদের শুধু যে ভর্তিযুদ্ধের এক আতঙ্কজনক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইতে হয় কেবল তাহাই নহে, অপচয় ঘটে বিপুল অর্থেরও। এইদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে পুঁজি করিয়া প্রতি বত্সর কোটি কোটি টাকা হাতাইয়া নেয় কোচিং সেন্টারগুলি। এই বাস্তবতার নিরিখে সংশ্লিষ্ট সকলেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবি জানাইয়া আসিতেছেন দীর্ঘদিন যাবত্।
মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ। তিনি ২০১৬ সালেই খোলাখুলি এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছিলেন। সর্বোপরি, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিষয়টি উত্থাপন করিয়াই তিনি ক্ষান্ত হন নাই, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য হিসাবে সম্প্রতি উপাচার্যগণের সহিত বৈঠকও করিয়াছেন। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেন। জানা যায়, ইতোমধ্যে সেই প্রস্তুতিও শুরু হইয়া গিয়াছে। সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করিয়াছে। ইহা ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সমন্বয়ে অপর একটি কমিটি গঠনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন আছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছেন, ইতোপূর্বে ইউজিসির পক্ষ হইতেও দফায় দফায় চেষ্টা করা হইয়াছিল, কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেই চেষ্টা সফল হয় নাই। এইবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা সম্ভব হইবে বলিয়া তিনি আশা প্রকাশ করিয়াছেন। আমাদের বক্তব্য এইটুকু যে কেবল আশা প্রকাশই যথেষ্ট নহে, লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের স্বার্থে এই সিদ্ধান্তকে অবশ্যই বাস্তব রূপ দিতে হইবে। আর তাহার জন্য যাহা যাহা করা প্রয়োজন তাহা করিতে হইবে অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত। আশা করি, সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও এইদিকে কড়া নজর রাখিবেন।