• শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

শিশুপার্কে শিশুদের নিরাপত্তা লইয়া গুরুতর উদ্বেগ

আপডেটঃ : বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ঝুঁকিপূর্ণ রাইড দিয়া চলিতেছে শাহবাগের ঢাকা শিশু পার্ক। রাইডগুলি মেয়াদোত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে আগেই। এখন জোড়াতালি দিয়া সেইগুলি সচল রাখা হইতেছে। বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া এই অবস্থা চলিয়া আসিলেও কর্তৃপক্ষের সেইদিকে দৃষ্টি নাই বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। অভিযোগটি সত্য হইলে তাহা অত্যন্ত গুরুতরই বলিতে হইবে। কারণ শত শত শিশু এই রাইডগুলি ব্যবহার করিতেছে নিয়মিত। তাহাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাইবার কথা থাকিলেও এই ক্ষেত্রে তাহা যে মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হইতেছে সেই ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নাই বলিলেই চলে। উল্লেখ্য যে ১৯৭৯ সালে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই শিশু পার্কটির বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে যাত্রা শুরু ১৯৮৩ সালে। ইহার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রহিয়াছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পার্কে সরকারি-বেসরকারি মিলাইয়া বর্তমানে ১৫টি রাইড রহিয়াছে। তন্মধ্যে সরকারি ১২টি রাইডের অবস্থাই অত্যন্ত নাজুক। যেকোনো মুহূর্তে ঘটিয়া যাইতে পারে গুরুতর দুর্ঘটনা। অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার মানও সন্তোষজনক নহে। তাহা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এককথায় মর্মান্তিকই বলিতে হইবে এবং তাহা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নহে।

আমরা জানি, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ শীর্ষক তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় পার্কের অভ্যন্তরে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান দুইটি সংরক্ষণ এবং শিশু পার্ক এলাকা দৃষ্টিনন্দন করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এ সংক্রান্ত মূল নকশাও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাভ করিয়াছে। তাহা সত্ত্বেও শিশুদের নিশ্চিত দুর্ঘটনার মুখে ঠেলিয়া দেওয়ার চরম দায়িত্বহীনতা একটুও লঘু হয় না। বিগত বত্সরগুলিতে সমাজ ও অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হইয়াছে তাহা বিশ্বস্বীকৃত। বাংলাদেশ যদি নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করিতে পারে— তাহা হইলে কেন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ একটি শিশুপার্ক এইভাবে অবহেলিত থাকিবে? আমাদের কর্তাব্যক্তিরা এত ঘন ঘন বিদেশ সফর করেন—তাহারা কি সেখানকার শিশুপার্কগুলি দেখেন না? আমাদের পার্কগুলি যেইখানে দিন দিন আরও আধুনিক ও শিশুবান্ধব হইবার কথা, সেইখানে কেবল পার্ক দখল, অব্যবস্থাপনা কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ রাইডের হতাশাব্যঞ্জক চিত্র কেন দেখিতে হইবে দিনের পর দিন? ইহার সর্বশেষ উদাহরণ হইল বরিশালে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিশু বিনোদন কেন্দ্র ‘গ্রীন সিটি পার্ক’। উদ্বোধনের দুই বত্সর যাইতে না যাইতেই পার্কটি পরিত্যক্ত হইয়া পড়িবার অভিযোগ উঠিয়াছে। শুধু অবকাঠামো নয়, যথারীতি পার্কের নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণেও অবহেলার অভিযোগ রহিয়াছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অর্থাত্ ইহা কোনো বিচ্ছিন্ন চিত্র নহে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার— তাহা বলা সহজ, কিন্তু পরিবর্তনটা করিবে কে? আমাদের অভিজ্ঞতা হইল, ভুক্তভোগী জনগণ সচেতন ও সোচ্চার না হইলে সেই পরিবর্তন সুদূরপরাহতই থাকিয়া যাইবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ