• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

কেন এই নির্লিপ্ততা?

আপডেটঃ : শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় গত বুধবার একদিনেই ঝরিয়া পড়িয়াছে ১৭টি অতি মূল্যবান জীবন। আহত হইয়াছেন আরো অন্তত অর্ধশত মানুষ—যাহার মধ্যে কাউকে কাউকে হয়তো আমৃত্যু বহিয়া বেড়াইতে হইবে পঙ্গুত্বের দুঃসহ বোঝা। হতাহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন সেইসকল পরিবারের জন্য অপেক্ষা করিতেছে এক অন্তহীন অনিশ্চয়তার ঘোর অন্ধকার। কিন্তু কেন এইভাবে জীবন ও সম্পদের অপচয় হইতে থাকিবে? একটু সতর্ক হইলেই যে বিপর্যয়ের মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব—তাহা জানা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কেন এই নির্লিপ্ততা তাহা আমরা বুঝিতে অক্ষম। গণমাধ্যমে অব্যাহতভাবে একের পর এক দুর্ঘটনার খবর প্রচারিত হইতেছে। বিশেষজ্ঞরা সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়া চলিয়াছেন। আর আমরা অবিরাম সম্পাদকীয় লিখিয়া যাইতেছি। কিন্তু কাহারও কোনো প্রকার বোধোদয় হইতেছে বলিয়া তো মনে হয় না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বুধবারের দুর্ঘটনায় শুধু ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জেই নিহত হইয়াছেন ১০ জন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ধরনও কমবেশি অভিন্ন। সুনামগঞ্জে বাস ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে কারের ৫ আরোহীই প্রাণ হারাইয়াছেন মর্মান্তিকভাবে। অন্যদিকে অজ্ঞাত বাসের চাপায় একটি ইজিবাইকের চালকসহ পাঁচজন নিহত হইয়াছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। হাইওয়ে পুলিশের হিসাবমতে, ২০১৭ সালে শুধু ফরিদপুরের মহাসড়কগুলিতেই দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে ১০৮টি। এই সকল দুর্ঘটনায় হতাহত হইয়াছেন প্রায় চার শত ব্যক্তি। সারা দেশের চিত্রও প্রায় অভিন্ন হইলেও দেশের কোনো কোনো সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার যে তুলনামূলকভাবে বেশি, তাহা সুবিদিত। যান্ত্রিক ত্রুটি ইহার মুখ্য কারণ হইলেও মহাসড়কগুলিতে অযান্ত্রিক যানবাহন এবং ইজিবাইক, নসিমন-করিমনের মতো শ্লথগতির গাড়িগুলিও কোনো অংশে কম দায়ী নহে। দুর্ঘটনারোধে প্রশাসনের পক্ষ হইতে বারবার মহাসড়কে এইসকল গাড়ি চলাচল বন্ধের কথা বলা হইলেও তাহা যে দেখিবার কেহ নাই—ভাঙ্গার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা তাহার আর একটি করুণ উদাহরণ মাত্র। চালকদের অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর মতো দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলিও সকলেরই জানা। হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা মহাসড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্য হাট-বাজারকে দায়ী করিয়াছেন। ইহাও কোনো নূতন বিষয় নহে। মহাসড়ক হইতে হাটবাজার উচ্ছেদের নির্দেশ আমরা শুনিয়া আসিতেছি দীর্ঘদিন যাবত্। প্রশ্ন হইল, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ সত্ত্বেও হাটবাজারগুলি উচ্ছেদ হয় না কেন? বাস্তবতা হইল, দুর্ঘটনার যতগুলি কারণ আছে তাহা একে একে বিচার-বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে যে, আইন আছে এবং তাহা বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট নির্দেশও আছে, কিন্তু কেহই তাহা গ্রাহ্য করিতেছেন না। আর এই উদাসীনতার বলি হইতেছে সাধারণ মানুষ।

প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সরকারের কঠোর মনোভাব এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করিয়া থাকি। এই ক্ষেত্রেও তাহাই বলিতে হইবে। কারণ সড়ক-মহাসড়কগুলিতে যে সর্বব্যাপী বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হইতেছে তাহার লাগাম টানিয়া ধরিতে হইলে নিঃসন্দেহে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করিতে হইবে। পাশাপাশি ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে, ভুক্তভোগী জনগণ এবং যানবাহনের মালিক ও শ্রমিক নির্বিশেষে সকলে সচেতন না হইলে পরিস্থিতির প্রত্যাশিত পরিবর্তন সুদূরপরাহতই বলা চলে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ