• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

র্যাগিং বন্ধে কঠোর হইতে হইবে শিক্ষকদের

আপডেটঃ : বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হইয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছেন। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং শারীরিক নির্যাতন করিয়াছে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। পুনঃপুন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হইয়া বৃহস্পতিবার রাত্রিতেই হলের বন্ধুদের সহিত অস্বাভাবিক আচরণ করিতে থাকেন ওই শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নাজুক হইলে শুক্রবার রাত্রে আত্মীয়স্বজনসহ তাহার বাবা দেখা করিতে আসিলে তাহাদের কাহাকেও চিনিতে পারেন নাই ওই শিক্ষার্থী। এখন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে তাহাকে চিকিত্সা দেওয়া হইতেছে। এই ঘটনায় গত রবিবার একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের চার শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হইয়াছে।

নূতন আসা শিক্ষার্থীদের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দ্বারা শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের নাম র্যাগিং। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বস্তুত ফৌজদারি অপরাধ। অথচ এই ফৌজদারি অপরাধটিই বহু দিন যাবত্ চলিয়া আসিতেছে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে ইংরেজিতে র্যাগিং শব্দটির প্রথম ব্যবহার দেখা যায়। ইহার অর্থ গোলমাল বা হৈ-হুল্লোড়। কৌতুকের ছলে কিংবা রসিকতার নামে অত্যাচার করাটা র্যাগিংয়ের বৈশিষ্ট্য। আমাদের উপমহাদেশে ইংরেজদের মাধ্যমে ইহার অনুপ্রবেশ ঘটে। বর্তমানে র্যাগিংয়ের চর্চা সবচাইতে বেশি শ্রীলঙ্কাতে। ভারতেও ইহার নিকৃষ্ট চর্চা দেখা যায়। বাংলাদেশেও অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের নামে নিপীড়ন নির্যাতন চলে। যাহারা আজ র্যাগিংয়ের শিকার হইতেছে তাহারাই আবার সিনিয়র হইয়া জুনিয়রদের অত্যাচার করিতেছে। আজকাল পরিস্থিতি এমন দাঁড়াইয়াছে যে, বিশ্ববিদ্যালগুলির হলে সিট বণ্টনসহ নানা ক্ষমতা আর শিক্ষকদের হাতে নাই, চলিয়া গিয়াছে ক্ষমতাসীন দলগুলির ছাত্রসংগঠনের অধিকারে। আর তাহারাই বস্তুত এই ‘ফাঁপড়’ দিবার অপরাধটি জারি রাখিয়াছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে র্যাগিং সংস্কৃতিটা দেশের সবচাইতে মেধাবীরাই অনুশীলন করিতেছে। ইহাকে তাহারা ‘মজা’, ‘আদব-কায়দা শেখানো’, ‘বাস্তব পৃথিবীর জন্য তৈরি করা’, ও ‘সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্কোন্নয়ন’ ইত্যাদি নামে প্রচার করে। বাস্তবে ইহা অপরাধমূলক এক চর্চা।

এই অভব্য ও অশিষ্ট চর্চার অবসান হওয়া দরকার। প্রতিটি আবাসিক হলের প্রভোস্ট এবং হাউস টিউটরগণ পালাক্রমে সন্ধ্যা হইতে মধ্যরাত পর্যন্ত মনিটরিং করিলে র্যাগিং ওরফে ‘ফাঁপড়’ নামের এই নিপীড়ন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিভাগে বিভাগে শিক্ষকগণ সতর্ক থাকা জরুরি। বিভাগীয় সভাপতি, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা আর প্রত্যেক অনুষদের ডিনগণ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারেন। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক র্যাগের বিরুদ্ধে মনিটরিং, ক্যাম্পেইন আর শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন হইতে রক্ষা করিবার এখতিয়ার আইনগতভাবেই রাখেন। এই অধিকারগুলি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে, র্যাগ বা নিপীড়ন বলিতে কী বোঝায় তাহা স্পষ্টভাবে লিফলেটসহ নানাভাবে শিক্ষার্থীদের অবগত ও সতর্ক করা প্রয়োজন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ