দেশে চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তথা ফোরজি সেবা চালু হইতে যাইতেছে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ফোরজি সেবা যথেষ্ট দেরিতে চালু হইলেও অবশেষে তাহা যে শুরু হইতে যাইতেছে, ইহা স্বস্তির বটে। তবে প্রকৃত স্বস্তি এখনো বহু দূরে রহিয়াছে কিনা—ইহা লইয়া সচেতন মহলে প্রশ্ন রহিয়াছে অনেক।
তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটের গতি একটি দেশের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করিয়া থাকে। আধুনিক এই সময়ে গতিই জীবন। আর সেই গতির মানদণ্ড নির্ধারিত হয় ভার্চুয়াল জগতের গতির হিসাব অনুযায়ী। আর, বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সেই গতির সক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থা এক অর্থে শম্বুক গতির সহিত তুলনীয়। মোবাইল নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি করাটাই ফোরজি সেবার মূল কথা। কিন্তু যেইসকল কারণে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে চালু হওয়া থ্রিজি সেবার মান যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নাই, সেই একই কারণ ফোরজি সেবার মানরক্ষার ক্ষেত্রেও প্রকট হইয়া উঠিতে পারে। বাংলাদেশে ফোরজি নীতিমালায় শুরুতে ইহার গতি নির্ধারণ করা হয় এক গিগাবাইট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস), পরে তাহা নামিয়া আসে ১০০ মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) এবং শেষে তাহা নির্ধারিত হয় ২০ এমবিপিএস। কিন্তু সেই ২০ এমবিপিএস গতিও নিশ্চিত নহে, কারণ অপারেটরদের দাবির মুখে গতির বাধ্যবাধকতা তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০ এমবিপিএস গতি পাইতে হইলে কমপক্ষে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ প্রয়োজন। কিন্তু ফোরজি সেবাদানকারী মোবাইল অপারেটরদের দখলে রহিয়াছে ইহার অর্ধেকের কাছাকাছি তরঙ্গ। তাহা ছাড়া ফোরজি সেবার সুবিধা প্রদান করিতে সবচাইতে জরুরি হইতেছে উন্নত অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা। এই নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণে বিদ্যমান থ্রিজি সেবাতেও সমস্যা প্রকট ছিল, সেই সমস্যা এখনো যায় নাই। অন্যদিকে, ফোরজি নেটওয়ার্ক যত বিস্তৃত হইবে, ততই ব্যান্ডউইথের চাহিদা বাড়িবে। জানা যায়, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল হইতে ১৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাইবার কথা থাকিলেও বিটিসিএলের ট্রান্সমিশন লিংকের দুর্বলতার কারণে পাওয়া যাইতেছে মাত্র ১৪০ জিবিপিএস। সুতরাং সমস্যা এখনো চারিদিকে বিস্তৃত। সেই সমস্যার জাল গুটাইতে হইবে। তাহা ছাড়া, বর্তমানে বাজারে ফোরজির ব্যবহার উপযোগী স্মার্ট হ্যান্ডসেট রহিয়াছে মাত্র ১৪ শতাংশ। সুতরাং ফোরজির জন্য উপযোগী স্মার্টফোনের সহজলভ্যতাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
আমরা আশা করিব, ফোরজি চালু হইবার পর ইহার সেবার মান খুব দ্রুত যুগোপযোগী করা হইবে। কেবল ফোরজি নহে, আশা করা যাইতেছে বেতার তরঙ্গ প্রযুক্তির নিরপেক্ষ ব্যবহারে, অর্থাত্ একই ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গ দিয়া টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবা প্রদানের ফলে এখন উঁচু ভবন কিংবা বেতার তরঙ্গের পকেট এলাকাগুলিতে নেটওয়ার্ক পৌঁছাইয়া দিতে আগের মতো সমস্যায় পড়িতে হইবে না। ইন্টারনেটের গতির পাশাপাশি ফোরজি প্যাকেজ যাহাতে সাশ্রয়ী ও যৌক্তিক হয়, সেইদিকেও বিশেষ নজর দিতে হইবে। দৃষ্টান্ত হিসাবে ফোরজি সেবাদানকারী অন্যান্য দেশের প্যাকেজ এইক্ষেত্রে তুলনীয় হইতে পারে।