• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চাই মহাপরিকল্পনা

আপডেটঃ : রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলিয়াছেন যে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়া ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ অর্জন করা সম্ভব নহে। এইজন্য বর্তমানের প্রয়োজনের সাথে আগামীর প্রয়োজন মাথায় রাখিয়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢালিয়া সাজাইতে হইবে। মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়া করা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন বক্তব্যের অবতারণা করেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ও কর্মসংস্থান তৈরিতে তাহার এই বক্তব্যের গুরুত্ব যে অপরিসীম তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। ইহার আগে আমরা একাধিক সম্পাদকীয়তে বলিবার চেষ্টা করিয়াছি যে, আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশে কোন খাতে কত সংখ্যক জনবল লাগিবে তাহার একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী দক্ষ জনসম্পদ গড়িয়া তোলা প্রয়োজন। কেননা সেই অনুযায়ী আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢালিয়া সাজাইতে না পারিলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হইবে না।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী দাবি করিয়াছেন যে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান হইয়াছে। ইহার সংখ্যা ৩৭ লক্ষাধিক। আমরা যদি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যানের প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহা হইলে দেখিতে পাই, বাংলাদেশে প্রতি বত্সর ১৮ লক্ষ মানুষ চাকুরির বাজারে আসিতেছে। এই হিসাবে এক বত্সরে ৩৭ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়াটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। জানা মতে, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-২০১৫) দেশে এক কোটি ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হইয়াছে। কিন্তু সমস্যা রহিয়া গিয়াছে ছদ্ম বেকারত্বের ক্ষেত্রে। দেশে শ্রম বাজারে যাহারা আসিয়াছেন তাহাদের প্রায় ৭৮ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। সুতরাং যে বৃহত্ পরিকল্পনার কথা আমরা বলিতেছি, তাহাতে এই ছদ্ম বেকারদের কথাও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখা দরকার।
বর্তমানে আমাদের দেশের অন্যতম বড় সমস্যা শিক্ষিত বেকারত্ব।  প্রকৃতপক্ষে দেশে ১৮ হইতে ২৯ বত্সরের তরুণ-তরুণীদের মাঝে শিক্ষিতের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। তাহাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটাই এই সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এইজন্য এমনভাবে অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করিতে হইবে যাহাতে শিল্প ও সেবা খাতের আরও বিকাশ সাধিত হয়। আবার দক্ষ জনবলের অভাব দূর করিতে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতেও নজর দেওয়া আবশ্যক। সামপ্রতিক কালে তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশ শিক্ষিত বেকারদের জন্য কিছুটা হইলেও আশীর্বাদ হিসাবে দেখা দিয়াছে।  এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ হইতে ২০২০ সালের মধ্যে এক কোটি ২৯ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হইবে। কিন্তু কর্মসংস্থানের বাজারে আসিবে ৯৯ লক্ষ মানুষ। এই অনুযায়ী আগামী কয়েক বত্সরের মধ্যে আমাদের বেকারত্ব সমস্যা থাকিবার কথা নহে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছাইতে হইলে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও স্বকর্মসংস্থানে নানাভাবে প্রণোদনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তাহা আমরা কতটা দিতেছি, তাহা নিয়াই আত্মসমালোচনায় বসা দরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ