এখন আমরা যেমন পৃথিবী দেখি, একটা সময় তা এমন ছিল না। কয়েকশ কোটি বছর আগে পৃথিবী অনেক উত্তপ্ত ছিল। সে সময় বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহ ছিল এখনকার তুলনায় ভিন্ন। তখন বাতাসে অক্সিজেন ছিল না, ছিল কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয়বাষ্প, মিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি গ্যাস। এই অবস্থায় প্রথম জৈবিক অণু অ্যামাইনো এসিডের সৃষ্টি হয় এবং পরে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রথম এককোষী জীবের জন্ম হয়। এসময় প্রথম সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বর্ণকণিকা ক্লোরোফিল সৃষ্টি হয় এবং শৈবাল জাতীয় জীবের আবির্ভাব ঘটে। প্রাণীর উদ্ভবের পূর্বেই পৃথিবীতে উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটে। তবে কবে প্রথম পৃথিবীতে উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটেছে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবীতে উদ্ভিদের আবির্ভাব সম্পর্কে এতদিন যে সময়ের কথা বলা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তার থেকেও দশ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিল উদ্ভিদের।
ন্যাশনাল একাডেমি অব সাইন্সের এই গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম চারশো কোটি বছর আগে পৃথিবীর মাটিতে অণুজীব ছাড়া অন্য কোন প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না। মোটামুটি সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে সালোকসংশ্লেষণ থেকে প্রথম অক্সিজেনের সৃষ্টি হলেও তা তেমন কোন কাজে আসেনি। পাথরের ওপরে জন্মানো সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলচে সবুজ শ্যাওলা থেকে প্রথম অক্সিজেন আসে। তবে এটা আসলে ভালো কিছু করেনি। অতিরিক্ত মাত্রার এই অক্সিজেনের কারণে তখন অনেক ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। আরো অনেক পরে উত্তপ্ত পৃথিবী ঠাণ্ডা হওয়ায় সুবাদে আস্তে আস্তে মাটিতে প্রাণের অস্তিত্ব ঘটতে থাকে।
আগের হিসাবের চেয়ে আরো দশ কোটি বছর আগে উদ্ভিদের উদ্ভবের পেছনে যুক্তি দেখাতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের জেনিফার মোরিস বলেন, এর আগে মাটির জীবাশ্ম নমুনা থেকে যে অনুমান করা হয়েছিল মূলত তার থেকেও দশ কোটি বছর আগে উদ্ভিদের উত্পত্তি ঘটেছিল। মাটির জীবাশ্ম নমুনা বিশ্লেষণের জন্য গবেষকরা ‘আণবিক ঘড়ির’ সাহায্য নিয়েছেন। আধুনিক যুগের অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ এবং সেই সময়ের জীবাশ্ম নমুনার জেনেটিক পার্থক্য থেকে মূলত আণবিক ঘড়ি ব্যবহার করে সময়ের হিসাব করেছেন গবেষকরা। এর আগেও একইভাবে আণবিক ঘড়ি ব্যবহার করে যে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল তাতে উদ্ভিদের আবির্ভাব সম্পর্কে যে সময়কালের কথা বলা হয়েছিল সর্বশেষ এই গবেষণায় তার থেকেও দশ কোটি বছর আগের সময়ের হিসাব পাওয়া গেছে।-বিবিসি