দুই বত্সর বন্ধ থাকিবার পর ঢাকা হইতে পুনরায় সরাসরি যুক্তরাজ্যে কার্গো বিমানে পণ্য পরিবহন সেবা চালু হইল। নিরাপত্তার অজুহাতে ২০১৬ সালের মার্চে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হইতে যুক্তরাজ্য সরাসরি কার্গো বিমানে পণ্য পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেই সময় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের সুযোগকে কারণ হিসাবে দেখানো হয়। যুক্তরাজ্যের পর অস্ট্রেলিয়া এবং পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল দেশ নৌ ও আকাশপথে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অন্যতম আয়ের উত্সই হইল কার্গো পরিবহন। স্বাভাবিকভাবেই এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে হ্রাস পায় বিমানের মুনাফা। এই দুই বত্সর অন্য দেশের মাধ্যমে রি-স্ক্যানিং করিয়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় কার্গো রফতানি কার্যক্রম পরিচালিত হইতেছিল। ইহাতে অর্থ ও সময় দুই দিক হইতেই ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কারণ সময় বাঁচাইতেই বেশি ব্যয়ে আকাশপথে পণ্য পাঠাইবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরাসরি কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকিবার কারণে ট্রানজিটে অনেক বেশি সময় নষ্ট হইয়াছে গত দুই বত্সর। পচনশীল পণ্য ও তৈরি পোশাকসহ বেশিরভাগ রফতানি পণ্য ইহাতে সমস্যায় পড়ে। দুই দেশের আন্তরিক সহযোগিতার কারণেই এই সমস্যা হইতে উত্তরণ সম্ভবপর হইল। নিষেধাজ্ঞা তুলিয়া লইবার ক্ষেত্রে গত বত্সর ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট যেই সকল শর্ত দিয়াছিল, তাহা পূরণ করা হইয়াছে। বর্তমানে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হইয়াছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইনকে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনেরও পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কার্গো পণ্য স্ক্রিনিংয়ে কাজ করিতেছে অ্যাভসেক ও বিজিবির ডগ স্কোয়াড। সর্বশেষ সংযোজন করা হইয়াছে অত্যাধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস)। এই সকল পরামর্শ মানিয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথোপযুক্ত করিবার পর গত রবিবার কার্গো বিমানে পণ্য পরিবহনের উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে যুক্তরাজ্য। আশা করা যাইতেছে, ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করা হইবে।
প্রকৃতপক্ষে আধুনিক বিশ্বের সহিত তাল মিলাইয়া চলিতে নিজেদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা হালনাগাদ করিবার বিকল্প কিছু নাই। বাংলাদেশ হইতে বত্সরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের (১ লক্ষ ৫২ হাজার কোটি টাকা) পণ্য রফতানি হইতেছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে বত্সরে বিমানে রফতানি হুমকির মুখে পড়িয়াছিল ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার পণ্য। ইহার পাশাপাশি প্রশ্নের মুখে পড়িয়াছিল দেশের ভাবমূর্তি। আধুনিক বিশ্বে এখন নিরাপত্তাই অগ্রাধিকার পাইয়া থাকে। সুতরাং ন্যূনতম অব্যবস্থাপনার মূল্য কেবল উহার হালনাগাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নহে, তাহাতে সার্বিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। পরবর্তী সময়ে যাহাতে নিরাপত্তার মান লইয়া প্রশ্ন না ওঠে, সেই ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করিতে হইবে।