• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা

আপডেটঃ : বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ইত্তেফাকসহ অন্যান্য জাতীয় দৈনিকে গত সোমবার তিনটি মর্মান্তিক নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হইয়াছে। রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ব্যাগ হইতে উদ্ধার করা হইয়াছে আঁখি নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মৃতদেহ। নিহত তরুণীর গলায় দাগ ছাড়াও তাহার ঘাড় ভাঙা ছিল। ধারণা করা হইতেছে, আঁখিকে হত্যা করা হইয়াছে নৃশংসভাবে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটিয়াছে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে। গত শুক্রবার রাতে কামারখন্দ এলাকার ভদ্রঘাট বাজার হইতে অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরিবার পথে গণধর্ষণের শিকার হন ২৮ বত্সর বয়সী এক তরুণী। তৃতীয় ঘটনাটি ফরিদপুরের। অটোরিকশায় রাজবাড়ী হইতে ফরিদপুর আসিবার পথে গণধর্ষণের শিকার হন এক নারী চিকিত্সক। তন্মধ্যে তিন ধর্ষককে আটক করিতে সক্ষম হইয়াছে র্যাব।

 

পত্রিকায় একই দিনে নারীর ওপর সহিংসতার যেই সকল খবর প্রকাশিত হয়, তাহার আড়ালে থাকিয়া যায় আরো অনেক মর্মান্তিক ঘটনা। কিন্তু যেইটুকু প্রকাশিত হয়, তাহাই শিহরিয়া উঠিবার মতো। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী ২০১০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ছিল ১৭ হাজার ৭৫২। পাঁচ বত্সরের ব্যবধানে ২০১৫ সালে মামলার সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়াইয়া যায়। মামলা যতগুলি তাহার তুলনায় নিপীড়নমূলক ঘটনার সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। কারণ লোকলজ্জার ভয়ে অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনা আড়াল করা হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্তৃক বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নারী নির্যাতনের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা একটি প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, দশ বত্সরে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হত্যা ও আত্মহত্যা করিয়াছেন ৫৬ সহস্রাধিক নারী। নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত, ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ২০০০ ও ২০০৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট-২০০৮, হাইকোর্ট নির্দেশিত পাশবিক নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা-২০০৮ পাস হইয়াছে। অর্থাত্ আইনের অভাব নাই। অথচ পরিসংখ্যান বলিতেছে, সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পাইতেছে দিন দিন। এই ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন ছাড়াও প্রয়োজন নারীর প্রতি সম্মান ও তাহার কাজের সঠিক মূল্যায়নসহ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

 

নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়িয়া তোলাটাও অতি গুরুত্বপূর্ণ। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়, শাস্তির তথ্য যদি বিভিন্নভাবে প্রচার করা হয়—তাহা হইলে অপরাধমনস্করা অন্তত এই বার্তা পাইবে যে, এই ধরনের অপরাধ করিলে শাস্তি পাইতেই হইবে। সুতরাং নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় রাষ্ট্র যদি আপসহীন, ক্ষমাহীন এবং জিরো টলারেন্স দেখায়, তাহা হইলে সমাজের ভিতরে যে মানসিক বৈকল্য ও অবক্ষয় তৈরি হইতেছে, তাহার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ানো সম্ভবপর হইবে। ইহার জন্য নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করিতে হইবে। ধর্ষণের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করিবার সুপারিশও করিয়াছেন অনেকে—যাহা গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবি রাখে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ