রাজধানীর পল্লবীর একটি বাসায় মঙ্গলবার পানির রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কার করিবার সময় বিস্ফোরণে পাঁচজন দগ্ধ হইয়াছে। দীর্ঘদিন ধরিয়া ট্যাংকটি পরিষ্কার না করিবার কারণে ট্যাংকের ভিতরে গ্যাস জমিয়া ছিল। কর্মরত শ্রমিক দিয়াশলাই দিয়া অগ্নি প্রজ্বলন করিলে ট্যাংকে জমিয়া থাকা গ্যাস হইতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। একই দিনে খুলনায় একটি জুট মিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়াছে। পরে আরো তিনটি গোডাউনে আগুন ছড়াইয়া পড়ে। ময়মনসিংহের ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় শনিবার মধ্যরাত্রে একটি ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ইহাতে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। গ্যাস সিলিন্ডার হইতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। এইরূপ প্রায়শই কাহারও রান্নাঘরে অথবা গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হইয়া হতাহতের ঘটনা ঘটিতেছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী নিবন্ধিত বিভিন্ন ধরনের গাড়ির সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক যানবাহনের একটা বড় অংশই রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ব্যবহার করিয়া থাকে। কেবল ব্যক্তিগত গাড়িই নহে, বাস-ট্রাকও সিএনজি সিলিন্ডার ব্যবহার করিয়া থাকে। কিন্তু অনেক গাড়িরই গ্যাস সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ হইবার পরও ব্যবহূত হইতেছে। নিয়মিত পরিচর্যা বা নিরীক্ষা না হইবার কারণে প্রায়ই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হইবার সংবাদ পাওয়া যাইতেছে। গ্যাসের লাইন হইতেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়া থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অবৈধ সংযোগ, গ্যাস বিতরণ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অযত্ন-অবহেলা এবং অদক্ষ মিস্ত্রিদের দ্বারা কাজ সম্পন্ন করা, নিম্নমানের ক্ষয়রোধী কভার ব্যবহার করা ইত্যাদি কারণে এই সকল দুর্ঘটনা ঘটিতেছে।
গ্যাস বিস্ফোরণ ও অগ্নি দুর্ঘটনার কারণগুলি আমরা জানিতেছি কিন্তু মানিতেছি না। আমরা সেই সম্পর্কে ক্রমাগত অবহেলা প্রদর্শন করিয়া চলিয়াছি। মনে রাখিতে হইবে যে, গ্যাস যেমন ব্যয়সাশ্রয়ী জ্বালানি, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও অসচেতনতার কারণে এক একটি গ্যাস সিলিন্ডার বোমার ন্যায় ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিতে পারে। গ্যাস বিতরণ ও সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন এইক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিতেছে, তেমনি যাহারা ইহা ব্যবহার করিতেছেন তাহাদের অসচেতনতাও এই ক্ষেত্রে বহুলাংশে দায়ী। অবৈধ গ্যাস সংযোগের মতো দুর্নীতিকেও কারণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়। গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনগুলি নিয়মিত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হইবে। বাড়াইতে হইবে এই সংক্রান্ত জনবল। গ্যাস কোম্পানিগুলির অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করিয়া গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন করিতে হইবে। গ্রাহকদেরও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সতর্কতা ও সচেতনতার পরিচয় দিতে হইবে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণ হইতে বিরত থাকিতে হইবে, ব্যবহার করিতে হইবে উন্নতমানের চুলা ও ফিটিংস। গাড়ির গ্যাসের সিলিন্ডার নির্দিষ্ট সময় পর পর রিটেস্ট করাইতে হইবে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বাতিল করিতে হইবে। একদিকে সেবাপ্রদানকারী সংস্থার সেবার মান যেমন বৃদ্ধি করিতে হইবে, তেমনি ব্যবহারকারীদেরও অধিক সচেতন হইতে হইবে। অবহেলা ও অসচেতনতার পরিণতি কতটা মর্মান্তিক হইতে পারে প্রতিটি দুর্ঘটনাই যেন তাহারই বার্তাবহ।