ব্যক্তিগত তথ্য কেনাবেচা করিয়া যাহারা রোজগার করে তাহাদের বলা হয় নজরদারি সংস্থা। আজকাল সেগুলিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলা হয়। এমন কথা বলিয়াছেন গোপন তথ্য ফাঁসকারী সাবেক সিআইএ এজেন্ট এডওয়ার্ড স্নোডেন। সম্প্রতি ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ ক্ষমা চাহিয়াছেন তথ্যচুরির ব্যাপারে। তাহার মতে, ফেসবুক পরিস্থিতির শিকার। তথ্যচুরির ভুল আর হইবে না।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি লইয়া জাকারবার্গ ক্ষমা চাহিয়াছেন বটে, তবে যেইটুকু তথ্য ফাঁসের কথা প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা বিশ্লেষকদের মতে বিপুল এক হিমশৈলের সামান্য চূড়া মাত্র। অভিযোগ উঠিয়াছে যে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামক একটি কোম্পানি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষককে ব্যবহার করিয়া বিপুল সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারী মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে। সেই চুরি করা বিপুল তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিকট ক্রমাগত পাঠানো হইতে থাকে মিথ্যা সংবাদ, বিজ্ঞাপন এবং ব্লগ। উদ্দেশ্য ছিল, তাহাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করা। ইহা নাকি সংঘটিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটারদের প্রায় এক-চতুর্থাংশকে প্রভাবিত করিবার উদ্দেশ্যে। এই কেলেঙ্কারি মার্কিনিদের জন্য উদ্বেগের বটে। কারণ তাহা মৌলিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের গোটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে। আমেরিকায় বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত তথ্যচুরি অনেক বড় অপরাধ।
ফেসবুক হইতে তথ্য চুরি হয়, এই অভিযোগ নূতন নহে। তবে তাহা স্বীকার করা ও ক্ষমা চাহিবার ঘটনা নূতন বটে। সেই ২০১১ সালের এপ্রিলে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস অভিযোগ করিয়াছিল ফেসবুকের তথ্যচুরির ব্যাপারে। তাহার পর অনেকবার ইহা লইয়া শোরগোল হয়। সম্প্রতি ফেসবুককর্মী স্যান্ডি প্যারাকাইলাস জানাইয়াছেন, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ছাড়াও আরো অনেক কোম্পানি ফেসবুক হইতে তথ্য চুরি করিয়া থাকে। তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হইল, ইহা তিনি কোম্পানির উচ্চতর কর্তাদের নজরে আনিবার চেষ্টা করিয়াছেন বটে, কিন্তু এই ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে এডওয়ার্ড স্নোডেন জানাইয়াছেন, লক্ষ লক্ষ ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রয় করিয়াই রোজগার করে ফেসবুক। ইউজার যে তথ্য তাহার পোস্টে দেন, তাহা হইতে অনেক তথ্য ফেসবুক বাণিজ্যিক কারণে তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলিয়া দেয়। সুতরাং অনেকেই বলিতেছেন, ফেসবুক আসলে তথ্যচুরির ঘটনায় ‘পরিস্থিতির শিকার’ নহে, তাহারা আসলে এই পরিস্থিতির ভাগীদার।
তবে অনেকেই মনে করেন, ফেসবুকের তথ্যফাঁসের ঘটনায় সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। ইন্টারনেট এমন একটি মাধ্যম, যাহার যেকোনো কিছু ব্যবহার করিলে যে কাহারো ব্যক্তিগত তথ্য কমবেশি ফাঁস হইয়া যাইতেই পারে। ইহা অনেকটাই স্বতঃসিদ্ধ। অর্থাত্ ইহা মনে রাখিয়াই ব্যবহার করিতে হয় ইন্টারনেট। সুতরাং দোষ কেবল ফেসবুকের নহে। এই ব্যাপারে প্রধান মাথাব্যথা মূলত বড় বড় রাজনীতিকদের, যাহাদের বিরুদ্ধে ইহা ব্যবহার করা হয়। আর ব্যবহারও করেন একজন রাজনীতিক আরেকজনের বিরুদ্ধে। অর্থাত্ ক্লায়েন্ট এইক্ষেত্রে কোনো না কোনো রাজনীতিক। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেবল সেই ব্যাপারে সহযোগী একটি টুল বা যন্ত্র মাত্র।