• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

নিয়ম মানিবার দায়িত্ব উভয় পক্ষের

আপডেটঃ : শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের রড দিয়া পিটাইয়া রক্তাক্ত করিবার অভিযোগ উঠিয়াছে ধানমণ্ডির একটি কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত সোমবার রাত ১২টার পর ধানমণ্ডির ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী হোস্টেলের নীচে এক বন্ধুর জন্মদিন পালন করিতেছিলেন। তাহারা সহপাঠীর জন্মদিন করিবার কারণে ফ্লোর ময়লা করিয়া ফেলিলে হোস্টেল শিক্ষক রাগিয়া যান। তিনি শিক্ষার্থীদের জিহ্বা দিয়া চাটিয়া ওই ফ্লোর পরিষ্কার করিতে বলেন। অতঃপর জানালার পর্দায় লাগানো অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ দিয়া শিক্ষার্থীদের আঘাত করেন ওই শিক্ষক। এই ঘটনা পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হইলে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি প্রদান করে।

এইখানে ছাত্র ও শিক্ষক উভয় পক্ষেরই নিয়ম মানিবার ঘাটতি লক্ষণীয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সহিত অসদাচরণ করিয়াছে হোস্টেলের নিয়ম না মানিয়া রাত বারোটার পর হইচই করিয়া। অন্যদিকে শিক্ষকও মৌখিকভাবে সতর্ক না করিয়া শিক্ষার্থীদের ওপর আঘাত করিয়াছেন, যাহা অনুচিত। শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির প্রভাব লইয়া ইউনিসেফের একটি গবেষণায় দেখা যায়—যেইসব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে শাস্তির মুখোমুখি হইয়াছে তাহারা আরো বড় হইয়া পড়ালেখায় তুলনামূলক খারাপ করিয়াছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ করিতে জাতিসংঘের এই সংস্থাটির ‘কনভেনশন অন দ্য রাইটস অফ দ্য চাইল্ড’ রহিয়াছে। ১৯৮৯ সালে গৃহীত এই কনভেনশনে ১৯৯০ সালে সই করে বাংলাদেশ। সেই আলোকে আমাদের দেশেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। কিন্তু শিক্ষকরা যেন অনেক ক্ষেত্রেই ইহাকে কেবল কাগুজে ব্যাপার বলিয়া মনে করেন। যে কারণে পত্র-পত্রিকায় প্রায়শই আমরা শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীদের আঘাতপ্রাপ্ত হইবার খবর দেখিতে পাই।

গত ৭ মার্চ বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর কনুইয়ের হাড় ফাটিয়া যায়। এই ধরনের অল্পবিস্তর ঘটনা বেশ মামুলি হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়াছে, ‘নিয়মানুবর্তিতার জন্য’ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের পক্ষে সায় রহিয়াছে ৬৯ শতাংশ পিতামাতা ও অভিভাবকের। ইহার মধ্যে স্পষ্টভাবে ৫৫ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, শাস্তি শিশুকে ভালো পথে লইয়া যায়। কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আমাদের দেশে বহুল পঠিত ও জনপ্রিয়। ইহার মূল বার্তা হইল, বাদশাহ-পুত্র শিক্ষাগুরুর চরণে পানি ঢালিয়াছে, কিন্তু নিজ হাতে চরণ ধুইয়া দেয় নাই বলিয়া কষ্ট পাইয়াছেন বাদশাহ। সুতরাং শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের সম্মানের দিকটি হইল আবহমান গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের মতো। এই দিক দিয়া আমাদের সমাজে শিক্ষকের সম্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্ররা যেমন তাহা মানিবে তেমনি শিক্ষককে বুঝিতে হইবে যেকোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার একজন শিক্ষার্থীর মনে অত্যন্ত গভীর প্রভাব ফেলে। ইহাও মনে রাখিতে হইবে, শিক্ষকের নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়া একজন শিক্ষার্থী ওই নিষ্ঠুরতার শিক্ষাটিও শিখিয়া নেয়। সুতরাং নিয়ম মানিবার গুরু দায়িত্ব রহিয়াছে ছাত্র ও শিক্ষক—উভয় পক্ষের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ